পাবনা ঈশ্বরদীর এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হল এখন মাদরাসা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হল বন্ধ করে ওই ভবনে মাদরাসা চালু করা হয়েছে। এতে ঈশ্বরদী ও এর আশপাশে ব্যাপক আলোচনায় উঠেছে মাদরাসা ও সিনেমা নিয়ে।
ঈশ্বরদী উপজেলার বিমানবন্দর রোডের গোকুলনগরে প্রায় চারযুগ আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাজু সিনেমা হল। তারপর থেকে দীর্ঘ দিন জনপ্রিয় এ হল চললেও গত ১৫ বছরে কয়েকবার বন্ধ আবার চালু হলেও এবার দর্শকের অভাবে আর চলানো যায়নি এ সিনেমা হল। অবশেষে মালিকপক্ষ ভাড়া দেয় উম্মুল কুরআন একাডেমি নামে এক মাদরাসার কাছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সিনেমা হল ভবনেই চালু করেছে পাঠদানসহ মাদরাসার কার্যক্রম।
মাদরাসার পরিচালক আব্দুল হামিদ এই প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায়, আমরা নতুন জায়গা খুঁজতে ছিলাম। তারপর জানতে পারি রাজু সিনেমা হল ভাড়া দিবে। এ খবর পেয়ে মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ভাড়া নিলাম।
আব্দুল হামিদ জানান, নিজের ঈমানের দাবীতেই সিনেমা হল ভবনে মাদরাসার জন্যে ভাড়া নিয়েছি। যদিও আমাকে বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে তারপরও এটা মেনে নিয়েছি। কারণ, যেখানে দ্বীনের চরম লঙ্ঘন হয়েছে সেখানে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে কাজে লাগানোর জন্যই এই ভবন ভাড়া নিয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে এখানে যদি আরেক তলা পাই তাহলে হিফজুল কুরআন বিভাগ চালু করব।
তিনি জানান, চাকরির সুবাদে আমি ঈশ্বরদীতে এলেও অনেক আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা ছিল। এখানে সময়-সুযোগ পেয়ে এটা হাতছাড়া করিনি। ২০১২ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে নিজ বাসার আঙিনায় মাদরাসার কাজ শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে পরিধি বাড়তে থাকে, আমিও প্রস্তুতি নিতে থাকি।
প্রধান শিক্ষক তারেক মাহমুদ জানান, বর্তমান জায়গায় আসার পর মাদরাসার পরিচিতি ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের সময় আমরা রাজু হলের ভবনে এসেছি, সেভাবে আনুষ্ঠানিক আয়োজন করতে পারিনি। তারপরও এটা এতো পরিচয় হয়েছে যে, প্রতিদিন মানুষ এসে দেখে যাচ্ছে।
রাজু সিনেমা হলের মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে আমার বাবা (দুলাল মিয়া) এ এলাকার সাংস্কৃতি প্রেমী মানুষের জন্যে এ পেক্ষাগৃহ (রাজু সিনেমা) স্থাপন করেছিলেন। এখন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভাড়া চাইলে সিনেমার ব্যবসা বাদ দিয়ে মাদরাসার কাছে ভাড়া দিয়েছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ১নং সাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যান্ত খুশি হয়েছি। কারণ, আগে যে এলাকায় সিনেমা হল থাকত সে এলাকার মানুষের মন ও মানসিকতা ভালো সৌজন্যবোধ বৃদ্ধি পেত, কিন্তু এখন তার উল্টা হয়। এখন সিনেমা হল এলাকার যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমার ইউনিয়নে সিনেমা হল বন্ধ করে মাদরাসা চালু করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানায়।
ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার বলেন, আমি এমন সংবাদ পেয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মানও সন্তোষজনক। আমার পক্ষ থেকে বই দেয়া থেকে শুরু করে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।