পেটের সন্তানদের বিক্রি করেই শখ মিটিয়েছে এই দম্পতি?

প্রথমবার যখন সদ্যজাত মেয়ে মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, তার দিন কয়েকের মধ্যে ঝর্নার বাড়িতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ এসেছিল। দ্বিতীয় বার ‘পেটে জল জমেছে’ জানিয়ে যখন ‘জল বের করতে’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তার পরে তাদের বাড়িতে নতুন বাইক ঢুকেছিল।

এভাবেই এক-এক বার এক-একটি ‘শখ পূরণ’ করেছেন কলকাতার দাস দম্পতি। এর বেশির ভাগটাই সন্তান বিক্রির টাকায় হয়েছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তাদের আত্মীয়রা।

আর এতেই তাজ্জব বনে যাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। তাদেরও প্রশ্ন, কীভাবে নিজেদের সন্তানদের একের পর এক বিক্রি করে দেওয়া সম্ভব? আর কীভাবেই বা সম্ভব তার পরেও এমন নির্বিকার থাকা?

পুলিশ জানায়, প্রায় রোজই বিকেলের দিকে লালবাজার থেকে ঝর্না-সঞ্জীব এবং গ্রেপ্তার হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হচ্ছে। দম্পতির মুখ থেকে বিক্রি হওয়া বাচ্চার সংখ্যা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাদের বক্তব্য, এক বারও বিক্রি হওয়া ছেলে-মেয়েরা কেমন আছে, তা জানতে চাননি ওই বাবা-মা। এমনকী, হোমে থাকা দুই ছেলে তাদের অনুপস্থিতিতে কেমন আছে, সেই প্রশ্নও করেননি। মঙ্গলবার পুলিশ ঝর্নার জা, শাশুড়ি এবং পরিবারের আরও কয়েক জনকে জেরা করে। তাদের কাছ থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক সন্তান বিক্রি করার পরেও বাবা-মায়ের পক্ষে এমন নির্লিপ্ত থাকা কি কোনও গুরুতর মানসিক ব্যাধি? মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, সমস্যাটা মানসিক নয়, বরং সামাজিক। তিনি বলেন, সামাজিক কোনও প্রতিবন্ধকতাই হয়তো এ ক্ষেত্রে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

অনেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার এখনও কন্যা সন্তানকে স্বাভাবিক ভাবে স্বীকার করতে পারে না। ফলে মেয়ে অন্য পরিবারে গেলে ভালো থাকবে, এই চিন্তার পাশাপাশি হাতে কিছু টাকা আসার চিন্তাও কাজ করে। এই ধরনের ঘটনা খুব বেশি সামনে না এলেও গোপনে অনেক কিছুই ঘটে বলে জানিয়েছেন মনোবিদরা।

গত ২ জুন মানিকতলার ওই দম্পতির এক আত্মীয় পুলিশের কাছে বাচ্চা বিক্রির অভিযোগ দায়ের করার পরেই পুলিশ তদন্তে নামে। প্রথমে মালদহে আড়াই মাসের শিশুপুত্রের খোঁজ মিললে তাকে উদ্ধারের পাশাপাশি সেই দম্পতিকে আটক করে কলকাতায় আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে ৪ জুন বড়তলা থানার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের এক বাড়ি থেকে দেড় বছরের এক শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় ওই তরুণীকেও।

জেরায় ওই তরুণী জানান, দেবজিৎ শেঠ নামে এক যুবক তার কাছে ওই শিশুটিকে এনেছেন। তবে অভিযুক্ত মা ঝর্নার দাবি, তিনি তার কন্যাসন্তানকে রত্না নামে এক মহিলার কাছে দিয়েছিলেন। সেই মহিলা যে মেয়েটিকে সোনাগাছির মতো জায়গায় বিক্রি করেছেন, তা তিনি জানতেনই না!

এ দিন সোনাগাছির বাসিন্দা ওই তরুণীর ঠিকানায় গিয়ে জানা গেল, তিনি আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়ে‌ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তার ভাড়া নেওয়া একতলার ঘরটি বন্ধই পড়ে রয়েছে।

তবে ওই তরুণীর এক দিদির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার বোন কন্যাসন্তানটিকে ‘দত্তক’ নিয়েছিলেন। কিন্তু বছর তেইশের তরুণী হঠাৎ করে কেন কন্যাসন্তান দত্তক নিলেন, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।-আনন্দবাজার