বগুড়ার শিবগঞ্জে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন মিটাচ্ছে স্থানীয় চাহিদা

বগুড়ার শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলা। মাটি উর্বর হওয়ায় সকল ধরণের ফসল ফলে এ উপজেলায়। প্রায় জমিতে বছরে ৪টি ফসল হয়ে থাকে। এবার উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পেঁয়াজের চাষ চোখে পরার মতো।

কৃষিবীদরা বলছে, এ উপজেলায় প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২০টন। চলতি বছরে উপজেলার পেঁয়াজের যে বাম্পার ফলন হয়েছে তা দিয়েই স্থানীয় চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে। তবে শেষ সময়ে এসে কৃষকদের চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে আবহাওয়া ও অস্থিতিশীল বাজার দর।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের চাষ অনেক বেশি হয়েছে। এবছর উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩১৫ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৭০ হেক্টর জমিতে দেশী জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭৯৫ মেট্রিকটন। গত বছর আবাদ হয়েছিল ২৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিলো ৩০০০ মেট্রিকটন।

তবে উপজেলার কৃষকদের দাবি, উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৪শত হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা অনেকটাই মেটাবে। তারা আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৭৫—৮০মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।

উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার উপজেলায় পেঁয়াজের চাষ ভালো হয়েছে। তার মধ্যে বিহার, আলীগ্রাম, উথলী, ডাবইর, মোকামতলা এলাকায় বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। কৃষকদের পেঁয়াজের ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। কেউ তুলছে আগাছা, কেউ দিচ্ছে বালাইনাশক স্পে্র, কেউবা পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে নিচ্ছে।

আলীগ্রামের পেঁয়াজ চাষী আজিমুদ্দীন মন্ডল বলেন, আমি এবার ৩বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি। গতবারের তুলনায় বীজ ও সার—কীটনাশকের দাম কিছুটা বেশি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বিগুণ স্পে্র করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে প্রতি বিঘায় গড়ে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। আশা করি সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার মতো পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবো।
মোকামতলা এলাকার কৃষক প্রফুল্ল চন্দ্র বলেন, আমি ২বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় ১০দিন আগেই তুলে বাজারে বিক্রি করেছি। খরচ বাদে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
শিবগঞ্জ বরকতিয়া কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আল—আমিন জানান, আমি প্রতিমণ ৩হাজার ৪শত টাকায় কিনে প্রতি কেজি ১শত ১০টাকায় বিক্রি করছি। পেয়াজের হঠাৎ দাম বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকেরা আগেভাগেই জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার কারণে ২দিনের ব্যবধানে দাম অনেকটা কমে এসেছে। দুদিন আগেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৬০—১৮০টাকায় বিক্রি করেছি।

শিবগঞ্জে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল—মুজাহিদ সরকার দৈনিক জয়যুগান্তরকে বলেন, এবার উপজেলা জুড়ে পেঁয়াজের ব্যাপক চাষ হয়েছে। আমরা আশা করছি বাজার দর ঠিক থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে এবং পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবে। আমরা সর্বাক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে সরকারি সহযোগীতা ও প্রণোদনা দেওয়াসহ কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার আমরা ১১৫ বিঘা জমিতে কৃষকদের পেঁয়াজের প্রণোদনা হিসেবে প্রতি বিঘার জন্য ১কেজি করে পেঁয়াজের বীজ ও ২০কেজি করে সার দিয়েছি। আশা করছি শিবগঞ্জের উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদার অনেকটা মেটাবে।