বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিল, বিশ্বাস নেইমারের

সময়ের স্রোত আরেকটি ফুটবল বিশ্বকাপকে নিয়ে আসছে সামনে। আজ রাতে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। মস্কোর জমজমাট ড্র দেখার জন্য আম-দর্শকদের মতোই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার প্রহর গুণছেন নেইমার। অপেক্ষা প্রহর ঠেলছেন আর ভাবছেন ড্র ভাগ্যের কথা। লটারিতে তাদের গ্রুপে কোন কোন দল পড়বে, গ্রুপটা কঠিন হবে নাকি সহজ, মনোজগতে খেলা করছে নানা প্রশ্ন। তবে সেসব বাদ দিয়ে মস্কোর ড্রর আগে পিএসজির ব্রাজিলিয়ান তারকা আপন মনে একটাই স্বপ্ন আঁকিয়ে চলেছেন, জিততে হবে বিশ্বকাপ।
.
আর রঙিন এই স্বপ্নের পাপড়ি ফোটাতে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান তারকার বারবারই মনে পড়ছে ২০১৪ নিজেদের মাটির বিশ্বকাপ দুর্ভাগ্যের কথা। যে কষ্টের কথা মনে হলে এখনো তার চোখ ভিজে যায় জলে। ফিফা ডট কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই কষ্ট-দুর্ভাগ্যের কথা বলতে গিয়ে আবেগে তরতর করে কাঁপলেনও নেইমার।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে ২০১৪ বিশ্বকাপে নেইমারদের ব্রাজিলই ছিল টপ ফেভারিট। কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে সেমিফাইনালেও উঠেছিল ব্রাজিল। কিন্তু শেষ চারেই স্বপ্নভঙ্গটা হয়। সেমিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় ব্রাজিল। তবে জার্মানির কাছে সেই হারের চেয়েও নেইমারকে বেশি কষ্ট দেয় নিজের দুর্ভাগ্যের বিষয়টি।
ব্রাজিল সেমিতে উঠলেও নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় কোয়ার্টার ফাইনালেই। কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ২-১ গোলে জিতলেও ওই ম্যাচেই পিঠে মারাত্ম্যক চোট পান নেইমার। কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার হুয়ান জুনিগা হাঁটু দিয়ে আঘাত করেন তার পিঠে। মাঠ থেকে সরাসরিই নেইমারের ঠিকানা হয় হাসপাতালে। ফলে শেষের আগেই শেষ হয়ে যায় তার বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

সেই কষ্টের কথা মনে করে বলেছেন, ‘এটা ছিল অদ্ভুত এক ব্যাপার। কারণ, আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারিনি। আমি অবশ্যই বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম। তবে আমরা জিতি বা হারি, আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট, আমি বিশ্বকাপ শেষ করতে পারিনি। গুরুতর চোটের কারণে টুর্নামেন্টটা শেষ হয়ে যায় আমার। দুর্ভাগ্যবশত, সে জন্য আমাকে মূল্যও দিতে হয়েছে।’
একটু থেমে আবার বলেছেন, ‘সত্যিই ওই সপ্তাহটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে। আমি অনেক কেঁদেছি। এবং অনেক অনেকবার নিজেকেই প্রশ্ন করেছি, কেন এমনটা ঘটল। তবে মজার ব্যাপার হলো, জীবনে যাই ঘটুক, তা আপনাকে আরও শক্তিশালী করবে। ওই ঘটনা থেকে আমি শিখেছি এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছে।’
নিজেদের ঘরের মাঠের সেই কষ্টটা নেইমার ভুলতে চান রাশিয়ায়। দেশকে ষষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপ জিতিয়ে। শুধু স্বপ্ন নয়, নেইমারের দৃঢ় বিশ্বাস, রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিলই। ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে এতোটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে আসলে ব্রাজিলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স।
২০১৪ বিশ্বকাপ দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল। কোচ তিতের অধীনে ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে সবার আগে। যা দেখে ফুটবল বোদ্ধারা ব্রাজিলকেই বিশ্বকাপের টপ ফেভারিট মানছেন। নেইমারও মনে করেন, আগের চেয়ে ব্রাজিলের বর্তমান দলটি অনেক বেশি সংগঠিত, খেলছে গোছানো-পরিকল্পিত ফুটবল। তাই বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এই বিশ্বকাপটা হবে ব্রাজিলিয়ানদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, বিশ্বকাপ জেতার জন্য আমি সবকিছুই করব।’
শুধু তিনি একা নন। ব্রাজিল দলের সব খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ জিততে মুখিয়ে আছে দাবি করে নেইমার বলেছেন, ‘বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দলের প্রত্যেকেই আত্মবিশ্বাসী এবং খুশি। কোনো কিছু দিয়েই এর মূল্যায়ন করতে পারবেন না।’