ভিড় বেড়েছে শেষ সময়ে, সময় চান করদাতারা

রাজধানীর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বুথগুলোতে করদাতাদের ভিড় বেড়েছে। তাঁরা লাইন ধরে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। ১ নভেম্বর থেকে শুরু করা সেবা মাস আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হয়ে যাবে। নতুন আয়কর আইনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।

একই সঙ্গে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) ধারীদের বিলম্ব সুদ ও জরিমানা দিতে হবে।এমন পরিস্থিতিতে করদাতারা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, নতুন কর আইন ও রিটার্ন জমা দেওয়ার নতুন ফরম বুঝে উঠতে তাঁদের সময় লাগছে। একই সঙ্গে দেশব্যাপী চলমান সরকারবিরোধী হরতাল-অবরোধে রিটার্ন জমা দিতে সময় লাগছে।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাও সময় বাড়ানোর কথা বলেছেন। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে কর সেবা মাসের সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইন প্রতিপালন ও পরিপত্র বিলম্বে প্রকাশের কারণে করদাতারা প্রস্তুতি নিতে তেমন সময় পাননি। অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অনেক করদাতার পক্ষেই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না।

এ কারণে রিটার্ন জমার মেয়াদ আরো এক মাস বাড়ানো প্রয়োজন।রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে সময় বাড়ানোর সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সবুজসংকেত পেলেই আদেশ জারি করতে পারে এনবিআর। সময় বাড়ানো হতে পারে এক মাস।বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

 

সেগুনবাগিচায় কয়েকটি কর অঞ্চলে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সারি সারি বুথ। বুথগুলোতে মাসের শুরুর তুলনায় রিটার্ন জমা দেওয়ার ভিড় বেড়েছে। করদাতারা লাইন ধরে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে রিটার্ন জমা দিতে তেজগাঁও থেকে এসেছেন শ্যামল কুমার সরকার। কর অঞ্চল-৮-এ তাঁর সঙ্গে কথা হয়। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ই-রিটার্ন ও চালান দেওয়া অনেক ঝামেলা। এ জন্য অবশ্যই সময় বাড়ানো উচিত।’

কর অঞ্চল-১-এর বুথের সামনে করবিষয়ক আইনি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান আবুল আব্বাস অ্যাসোসিয়েটসের কর্মী রশিদ শেখ বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি রিটার্ন জমা দিই। বুথে সহজেই রিটার্ন জমা দিতে পারছি।’

কর অঞ্চল-১১-এর পরিদর্শক মো. কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে। ২৫ তারিখ পার হলে সবাই দ্বিধায় থাকেন। ৪৩টি সেবার ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট দরকার হয়।’

কর সেবা মাসের সুবিধার বিষয় উল্লেখ করে এনবিআরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সময় পার হয়ে গেলে কর সেবা মাসের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে না; যেমন—বিনিয়োগে কর রেয়াত সুবিধা, করমুক্ত আয় সুবিধা, কর অব্যাহতি সুবিধা ইত্যাদি। এখন সময় বাড়ানো হলে এই সুবিধাগুলো করদাতারা পাবেন।’

এনবিআর থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে ৩১টি কর অঞ্চলে ৬০০টির বেশি সার্কেলে করসেবা মাসের রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে। সময় বাড়ানো না হলে ৩০ নভেম্বর সেবা মাস শেষ হয়ে যাবে। এবার এক পেজের ফরমে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁদের ৪০ লাখ টাকার মধ্যে সম্পদ ও পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে বার্ষিক আয়, শুধু তাঁরাই ঘরে বসে এক পাতার ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। বাকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্য করদাতাদের বিভিন্ন কর অঞ্চলে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে।