ময়মনসিংহে যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী রাজাকার তারা গ্রেপ্তার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী মোখলেছুর রহমান ওরফে তারাকে ময়মনসিংহ শহরের ধোপাখোলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৪।

জানাযায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের নকলা উপজেলার নকলা হাইস্কুলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা মোখলেছুর রহমান ওরফে তারাসহ কতিপয় রাজাকারের সহায়তায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। অভিযুক্ত মোখলেছুর রহমান তারা এর নেতৃত্বে কতিপয় রাজাকার নকলা গ্রামের সাধারণ মানুষদেরকে ধরে নিয়ে এসে ঐ ক্যাম্পের পাকিস্থানী আর্মিদের বাংকার, বন্দিশালা, টর্চারসেল তৈরীর কাজে জোরপূর্বক বাধ্য করতো।
রাজাকার মোখলেছুর রহমান তারার নেতৃত্বে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে নিয়ে উক্ত বন্দিশালায় অমানবিক নির্যাতন ও হত্যা করা হতো।

১৯৭১ সালের ২১ জুলাই রাত্র ৩.৩০ টায় রাজাকার তারা‘র নেতৃত্বে শেরপুর জেলার নকলা থানাধীন বিবির চর গ্রাম থেকে সোহরাব উদ্দিন‘সহ তার শ্যালক কুদ্দুস এবং কুদ্দুসের চাচাতো ভাই মোবারক আলীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তাদের হত্যা সহ বাড়ীঘর আগুনে পুরে দেয়।১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট বিকাল ৫.০০ টায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোঃ শাহজাহান আলী সজু নামাজ শেষে নকলা বাজারের দিকে আসার পথে রাজাকার তারা‘র নেতৃত্বে তাকে জোরপূর্বক নকলা থানার অদূরে নকলা স্কুলে টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে।

এরই প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-১১/২০১৬ রুজু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

উক্ত মামলায় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্ণিত মানবতাবিরোধী অপরাধে পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে র‍্যাব-১৪ ময়মনসিংহ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২১/০৬/২০২৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩৫ টায় র‌্যাব-১৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ময়মনসিংহ শহরের কোতোয়ালী থানাধীন ধোপাখোলা এলাকা হতে মোঃ মোখলেছুর রহমান তারা (৭০), পিতা- মৃত ময়েজ উদ্দিন আহম্মদ, মাতা-মৃত মালেকা খাতুন, সাং- কুর্শা বাদাগৈর, ৬নং ওয়ার্ড, নকলা পৌরসভা, থানা-নকলা, জেলা-শেরপুরকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত মোখলেছুর রহমান তারা“ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে।সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক শেরপুরের নকলা এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মোঃ মোখলেছুর রহমান তারা মহান মু্ক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে শেরপুরের নকলা এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত মোখলেছুর রহমান তারা মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়।

এ সময় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিল। আত্মগোপনে থাকাকালীন সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতো।