যমুনার বাঁধে ব্যাপক ধ্বস : হুমকির মুখে বাড়ি-ঘর

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের ভাটপাড়া নতুন বাজার ও গুদিবাড়ি এলাকায় যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধে গত দু‘দিন ধরে ব্যাপক ধস শুরু হয়েছে। এতে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের গুদিবাড়ি এলাকায় ৪শ মিটার ও ভাটপাড়া নতুন বাজার এলাকায় ২শ মিটার এলাকা ধসে গেছে।

ধ্স অব্যাহত থাকায় ওই এলাকার ৩ শতাধিক বাড়ি-ঘর, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি হাইস্কুল, ২টি মাদরাসা-মক্তব, ৩টি মসজিদ, ১শ তাঁত ফ্যাক্টরি, ১টি মাজার, ৫শ বিঘা ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকাবাসী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

হোরদিঘুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরজাহান খাতুন বলেন, এ বিদ্যালয়ে সাড়ে ৪শ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে এদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয়রা মাছ ধরার জন্য তীর সংরক্ষণ বাঁধের সিসি ব্লক সরিয়ে ধর্মজাল বসাতে জিওটেক্স ফুটো করে বাঁশ পোতে। এ ছাড়া নৌকা তীরে বাঁধতে মাঝিরা লোহার শিকের খুটি সিসি ব্লকের খাঁজের মধ্যে জিওটেক্স ফোট করে পোতে। ফলে ওই সকল লিকেজ স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নিচের বালু মাটি সরিয়ে ফেলে ভাঙনের সৃষ্টি করে। তদারকির অভাবে তারা প্রকাশ্যে এ অন্যায় কাজ করায় ১শ বছর টেকসই ক্ষমতার বাঁধটি ২ বছর না যেতেই ভাঙন ও ধসের কবলে পড়েছে।

গুদিবাড়ি ও ভাটপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন, কায়েম উদ্দিন, চায়না খাতুন, সায়েদ আলী, আমজাদ ব্যাপারি জানান, ভাঙ্গন আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারিনা। সারারাত বসে কাটাই। নদীতে বাড়ি-ঘর চলে গেলে কোথায় যাব, সেই চিন্তায় রয়েছি। নদীতে বাড়ি-ঘর চলে গেলে নিঃস্ব হয়ে পথে বসে যাব।

তারা বলেন, তাদের মতো এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাই দ্রুত এ ভাঙনরোধে তারা কার্যকরি পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে কৈজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনও, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, কৈটোলা ফ্রেমিদ প্রজেক্টের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাঙন ও ধস অব্যাহত আছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেহেলী লায়লা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কৈটোলা ফ্রেমিদ প্রজেক্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, বাঁধটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১০ সাল নাগাদ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১৮ কোটি টাকার মতো। বাঁধটি নির্মাণের ফলে এ এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পায়। কিন্তু বাঁধটি নির্মাণের ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনো রিপিয়ারিং কাজ করা হয়নি। ফলে বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই দুর্বল স্থানগুলোর মাটি সরে গিয়ে এই ধ্বসের সৃষ্টি করছে।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বাঁধটি ফ্রেমিদ প্রজেক্টের আওতায় নির্মিত। তাই এ ধ্স রোধে কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে ফ্রেমিদ প্রজেক্টর ডাইরেক্টর আমিনুল হক জানান, পুরো প্রজেক্টটি রিপিয়ারিং প্রয়োজন। এ জন্য ফান্ড সংগ্রহের চেষ্টা করছি। ফান্ড পেলে অচিরেই রিপিয়ারিং কাজ শুরু করা হবে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।