যশোরের শার্শার বেলতলায় জমে উঠেছে মৌসুমী ফল কুলের বাজার

যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলা বাজারে- বাণিজ্যিক ভাবে জমে উঠেছে মৌসুমী ফল কুলের (বরুই) বাজার। আম, এবং কুল মৌসুমে মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার সব আড়ৎ গুলো। প্রতিদিন এখান থেকে দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে রপ্তানি হচ্ছে এই মৌসুমী ফল কুল। বতর্মানে এই অঞ্চলের ‘অর্থকারী ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ পেয়েছে কুল, কোথাও কোথাও এই ফলটিকে চেনে আবার বরুই ফল হিসাবে।

যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা ও কলারোয়া উপজেলার মাঠ সহ আশেপাশে আরো মাঠ জুড়ে চাষ হচ্ছে এই লাভ জনক ফসলটি, তাইতো দিনে দিনে অন্য কৃষকেরাও ঝুঁকছেন এই কুল চাষে।

কুলের বাজার দর: বল সুন্দরী আগে ১৩০ টাকা এখন ৭০, থাই কুল আগে ১৮০ টাকা এখন ৬০, টক কুল আগে ১৫০ টাকা এখন ৬০ চায়না আগে ৭০ এখন ৪০, কাশ্মিরি কুল আগে ছিল ৭০ টাকা এখন ৩০ টাকা।

স্থানীয় কুল চাষী আতাউর রহমান জানান, আমি দশ বছর ধরে ফুল চাষ করছি ,এ বছর আমি দশ বিঘা কুল চাষ করছি ,গত বছর ও আট বিঘা কুল চাষ করছিলাম, গত বছরের থেকে এ বছর আমার অনেক কুল হয়েছে এবং অনেক দামে কুল বিক্রয় করছি, এভাবে যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রয় করতে পারি তাহলে এ বছর আশানুরূপভাবে অনেক লাভবান হতে পারব ইনশাল্লাহ।

এই বাজার সম্বন্ধে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিগত ১০ বছর ধরে কুল চাষ করছি আমি এর আগে আরো অন্যান্য বাজারে কুল বিক্রয় করেছি কিন্তু বেলতলা বাজারে কুল বিক্রয় করে যে মজা এবং শান্তি পাইছি আর কোথাও পাইনি। কারণ এখানকার আড়ৎদারা সঠিক দামে এবং সঠিক ওজনে কুল বিক্রয় করে এবং টাকা নিয়ে কোন নয় -ছয় করে না।

ঢাকা জামালপুর থেকে আসা কুল বেপারী পরেশ চন্দ্র সরকার ও তহিদুর রহমান জানান, আমি ১৫ বছর যাবত আম ,কুল, তরমুজ, আনারস সহ বিভিন্ন ফলের ব্যবসার সাথে জড়িত আছি সেই সূত্রে প্রতিবছরই বেলতলার এই ফলের মোকামে আসা হয়।এ বছর দেশে কুলের ফলনটা আশানুরূপভাবে অনেক বেশি। তারপরেও কুলের দাম অনেক বেশি আমরা যেমন বেশি দামে কিনতেছি ঠিক তেমন বেশি দামি বিক্রয় করছি। চাহিদা বেশি থাকায় আমরা কুল কিনে ভালো দামে বেচতে পেরে অনেক খুশি ও লাভবান এবং চাষীরাও লাভবান।

বাজারের স্থানীয় আড়ৎদার মোঃ আল- উজায়ের (সুজন), আব্দুর রাজ্জাক ও এই বেলতলা বাজারের একজন সফল আড়ৎদার মোঃ আবুল কালাম (আজাদ) জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর কুলের ফলনটা অনেক বেশি আর সেই সাথে কুলের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আমাদের ব্যবসা এবছর ভালো এবং চাষীরাও অনেক খুশি।

আমাদের এই বেলতলা বাজারে চাষিরা নিঃসন্দেহে সঠিক ওজনে এবং সঠিক মূল্য ফল বিক্রয় করতে পারে তাই আমারা সকল চাষীকে বিনয়ের সাথে আহবান করব তারা যেন আমাদের এই বাজারে কুল বিক্রয় করতে আসে। এ বাজারে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কুল ক্রয় বিক্রয় করা হয়।

বেলতলা বাজারের ফল ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ লোকমান হোসেন জানান, তারা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

পরিশেষে তিনি আরো বলেন গত দুই এক বছর এর তুলনায় এ বছর যেমন অনেক কুল চাষ করেছে এবং তারা অনেক বেশি লাভবান হয়েছে ঠিক এভাবে যদি আরো ২-১ বছর যায় আমি আশাবাদী বেলতলা বাজার বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে বিখ্যাত (আম বাজার) হিসাবে যে একটা খ্যাতি অর্জন করেছে ঠিক তেমনি কুল বাজার হিসাবেও একটা পরিচিতি লাভ করবে ইনশাল্লাহ।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা জানান, এ বছর মোট ৭০ হেক্টর জমিতে ৩০০ জন চাষী কূল চাষ করেছেন। তিনি আরো জানান, বেলতলা বাজার পরিদর্শন করে আমি যেটা দেখলাম হাতেগোনা কিছু জাত যেমন বল সুন্দরী, থাই, আপেল, চাইনা,টক,এই কুল গুলোই এ বছর চাষিরা বেশি চাষ করছেন এবং তারা লাভবানও হয়েছেন। তাই তারা আগামী বছরেও এই লাভজনক ফল কুল চাষ করবেন।