সাতক্ষীরায় পালিয়ে থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন মাদ্রাসা সুপার

নাশকতাসহ কয়েকটি মামলার আসামি, আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজির হয়না সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর কুড়িগ্রাম ইসলামিয়া সিদ্দিকিয়া আলিম মাদ্রাসার সুপার অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। তবে মাদ্রসায় না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে গত ১৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০ থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত মাদ্রাসায় অবস্থান করেও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্বেও নেই তিনি। এসময় শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখতে চাওয়ায় গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হন অধ্যক্ষমনা অন্য শিক্ষক কর্মচারিরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের পিতা মৃত সোহরাফ উদ্দিন গেজেট ভক্ত রাজাকার (যার সিরিয়াল নং-১৫২)। বিগত ২০১৮ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি হামলা মামলা, দখল বাজি, এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চলমান জিআর ৫৫/২২, ১৪৫/২২, ১৫০/২২ মামলাসহ কয়েকটি নাশকতা মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বর্তমানে পার্শবর্তী কাকড়াবুনিয়া গ্রামের আজিজুর রহমান করা ঘের দখল মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন। সেখান থেকে পলিয়ে থাকলেও তিনি নিয়মিত হাজির দেখিয়ে নিচ্ছেন বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা। তবে এমন ঘটনা নতুন নয় এর আগেও পালিয়ে থেকেই নিয়েছেন বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা।

অভিভাবক শামিম হোসেন বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমার প্রতিবেশি সে প্রাই সময় বাইরে থাকে। তবে নিয়মিত বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা নিলেও মাদ্রাসায় আসছে না।

এদিকে, মাদ্রাসার সুপার মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক মো. তানজিল আরাফাত বলেন, আমার জানামতে অধ্যক্ষ মহোদয় অফিসিয়াল কাজে ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় আছেন, ছুটির দরখাস্ত ম্যানেজিং কমিটির কাছে আছে। তবে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি এই শিক্ষক।

একই কথা বলেছে মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, সুপার হুজুর মাঝে মাধ্যে অফিসিয়াল দায়িত্বে বাহিরে থাকেন, মাঝে খুলনায় গিয়েছিল রেজিস্ট্রেশন কার্ড আনতে, ঢাকায় গিয়েছিল শিক্ষকদের বেতন ভাতার জন্য। এখন কয়দিন ছুটিতে আছে, এই দুই তিন দিন দরখাস্ত দিয়ে তাই গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না এসে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ, সুপার হুজুরের ম্যানেজিং কমিটির কাছ ছুটি নেওয়া আছে। বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা

তবে এব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রেজাউল মোড়ল বলেন, মাদ্রাসার কোন বিষয়ে আমার সাথে কেউই যোগাযোগ করেনা, সবার যা ইচ্ছে তাই করে, আমি অসুস্থ বিধায় ওদেরকে ধরতে পারিনা। ছুটির দরখাস্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ছুটির বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি, দরখাস্তও করেনি, মাদ্রাসার সুপার ইচ্ছে মত সব করে বেড়ায়, আমি সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি চাচ্ছি, আপনারা আমাকে অব্যহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এসব বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শাহাজাহান কবীর বলেন, বিষটি আমি অবগত নয়। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।