নীলফামারীতে জমিদারী আমলের ইতিহাস ঐতিহ্য’র বিষ্ণুমন্দির

হামিদা আক্তার, নীলফামারী থেকে : ইতিহাস ঐতিহ্য’র জমিদার শাসন কিংবা প্রথা এখন শুধুই স্মৃতি আর ইতিহাস সমৃদ্ধ। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে যেন এক কল্পনা। কিন্তু এই তো সে দিন মাত্র এক দেড়’শ বছর পূর্বেই আমার ঠাঁকুর দা ছিলেন এই অঞ্চলের জমিদার। তৎকালীণ রঙ্গপুর (রংপুর) মহুকুমার রাজা রাম মোহন পুরো রংপুরে জমিদারী শাসন চালাতেন। আমার বাবাও দেখেছেন সে জমিদারী। ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে ইতিহাস খ্যাত ঐতিহাসিক একটি মন্দিরের খোঁজ খবর নিতে গিয়েই একান্তে আলাপ চারিতায় উল্লেখিত কথাগুলি বলছিলেন নীলফামারীর পলাশবাড়ী ইউনিয়নের তরণীবাড়ী বাবুপাড়া গ্রামের জমিদার স্বর্গীয় ধর্মনারায়ণ রায় বসুনীয়ার নাতী স্বর্গীয় জোগেন্দ্রনাথ রায়ের পুত্র ৮২ বছর বয়সী ধীরেন্দ্রনাথ রায়। দীর্ঘক্ষন একান্ত আলাপে ধর্মনারায়ণ রায় তৎকালীণ সময়ের কিছু কথা তিনি এভাবেই বলেন-আমার ঠাঁকুরদা ধর্মনারায়ণ ছিলেন এ অঞ্চলের জমিদার। তিনি প্রায় ২ হাজার একর জমির জমিদারী দেখতেন। আর আমার ঠাঁকুরদাকে দেখাশুনার ভার ছিলো রাজা রামহন রায়ের একান্ত ও আস্থাভাজন হিসাবরক্ষক স্বর্গীয় বাবু উপেন্দ্রনাথের উপড়। তিনি রংপুর থেকেই ঠাঁকুরদার এ জমিদারী দেখাশুনা করতেন। ১২০৪ বঙ্গাব্দে (অনু:) প্রায় ২’শ ২০ বছর আগে ঠাঁকুরদার জমিদারী আমলেই নির্মিত হয় নির্মাণ শৈলীর এই কৃষ্ণ মন্দিরটি। তিনিই নিার্মণ করেন এই মন্দির। তিনি জানান, তৎকালীণ সময়ে এই বিষ্ণু মন্দিরটি পরিচালনায় আমার ঠাঁকুর দা ঠাঁকুরের নামে উৎসর্গ করেন প্রায় এক’শ একর জমি। কালের পরিবর্তনে জমিগুলি এখন আর মন্দিরের নামে নেই। ধীরে ধীরে দেবত্ত¡রের নামে উৎসর্গীয় এই জমিগুলি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি ও বেদখল হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, সে সময়ে মন্দিরের ভক্তদের জন্য মন্দিরের পার্শ্বেই খনন করা হয় প্রায় ৫’শ থেকে ৬’শ ফুট গভীর তিনটি ইন্দ্রিরা (কুয়া)। এই ইন্দ্রিগুলি থেকেই জ্বল তুলে ভক্তবৃন্দ জ্বলপান করতেন। যেগুলি এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে এখানেই। বর্তমানেও ইন্দ্রিগুলির গভীরতা রয়েছে প্রায় ১’শ থেকে ২’শ ফুট । মন্দিরটি অনেক পুরনো হলেও এখনও কোন সংস্কার ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস ঐতিহ্য’র শতশত বছরের স্বাক্ষী হয়ে। মন্দিরটির প্রবেশ দ্বারে রাখা হয়েছে দুইটি সিড়ি। মন্দিরের চারি দিকে নির্মাণ শৈলীতে রয়েছে গনেশ ঠাঁকুরের মূর্তি। বেশকিছু নির্মাণ শৈলী রয়েছে মন্দিরের গাঁয়ে। অনেক পুরনো হওয়ায় ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ছে সেগুলি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে বলেন, মন্দিরটি সরকারের প্রতœতত্ত¡ বিভাগের আওতায় নেওয়া হলে হয়ত মন্দিরটি ইতিহাসের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে আরো হাজারও বছর ধরে। সেই সাথে মন্দিরটি সংস্কারের দাবীও করেন তিনি।