কুড়িগ্রামে তিস্তা নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশ একর আবাদী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। কয়েকমাস ধরেই এই ভাঙন চলছে। কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় কেউ আমলে নেয়নি। এমনই অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই এলাকায় ভাঙনকবলিত মানুষদের আহাজারির শেষ নেই। নিমিষেই নদীতে মিশে যাচ্ছে বসতবাড়ি। সদ্য নদী ভাঙনের শিকার পরিবারের স্থান এখন খোলা আকাশের নিচে। অনেকেই জানে না তারা কোথায় আশ্রয় নেবেন। এদিকে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, পাউবোর পদক্ষেপ থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে বরাদ্দকৃত জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়নি। উপজেলার পাত্রখাতা শেষ সীমান্ত ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কারেন্ট বাজার এলাকায় গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে কয়েক মাস ধরে এই ভাঙন চলছে কিন্ত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি।

রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আব্দুল আজিজ আকন্দ বলেন, হুমকির মুখে রয়েছে মন্ডলেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারীপাড়া মন্ডলেরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাহ দাখিল মাদরাসা। ভাঙন রোধ করতে না পারলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও নদীতে বিলীন হতে পারে। তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় দ্রুত এর প্রতিকার করা না হলে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে উপজেলা সদরও।

ভাঙন এলাকার বাহারউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্যাষ জায়গাটুকুও রক্ষা করবের পাই নাই। নদী তো ভাঙ্গি নিলো এহন আমরা কই যামো, বউ ছাওয়া নিয়ে থাকমো কই। চোখের সামনে এমন ভাঙন এর আগে দেখি নাই বাবা, সরকার কি হামার দিকে দেখে না। বস্তাত (জিও ব্যাগ) বালু ভরে রাখছে নদীত আর ফেলায় না!’

এছাড়া ওই এলাকার গনি, সুবলসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ‘সময়মতো জিও ব্যাগ ফেলা হলে হয়তো এতোটা ভাঙন হতো না। আজ আমাদের বাড়িঘর সরানো লাগত না।’ আরেকজন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ভাঙনের মুখে ঠিক একটু দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে জিও ব্যাগ ভরাট করছে ঠিকাদারী ওই প্রতিষ্ঠান। তবে ভাঙন রোধে এসব কতটুকুই বা ভূমিকা রাখবে!’

এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন রোধে ওই এলাকায় ৭০ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত জিও ব্যাগ নদীতে ফেলার কাজ শুরু হবে।