খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য এলাকায় কাঁচা কাঁঠাল রান্না করে খাওয়ার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসহ তিন পার্বত্য অ লের পাঁকা কাঁঠাল এক সময় গরু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। কাঁঠাল বাজারের বিক্রি করতে নিয়ে আসতো না। তবে বর্তমানে পাঁকা কাঁঠালের চেয়ে কাঁচা কচি কাঁঠালের তরকারি রান্না করে খাওয়া জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পাহাড়ি হোটেলগুলোতে কাঁচা কাঁঠালের সবজি পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তবে পহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মাঝে কচি কাঁঠালের তরকারি খুবই প্রিয়। কাঁঠালে প্রচুর পরিমান খাদ্যগুণ রয়েছে। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে বিভিন্ন আইটেমের তরকারী তৈরি করে খাওয়া যায়। বৈসাবি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে কাঁচা কাঁঠালসহ অনেক সবজি দিয়ে লাবরা রান্না করে খাওয়া হয়।

পাহাড়ে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠি’র সকল স¤প্রদায়ের মাঝে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু চৈত পরবে ১০১এক ধরনের সবজি দিয়ে পাঁচন রান্না করতে কাঁচা কাঁঠাল অবশ্যই লাগবে। গত বৃহষ্পতিবার হাটে কাঁচা কচি কাঁঠাল বিক্রি করতে আসেন আলুটিলা এলাকা থেকে রেসনি ত্রিপুরা(২৮)। তিনি বলেন পাঁকা কাঁঠালের চেয়ে কাঁচা কাঁঠালের চাহিদা বেশি। এখন পাহাড়ি-বাঙ্গালি অনেকে কচি কাঁচা কাঁঠাল কিনে নিয়ে যায়। মাঝারি আকারে কাঁচা কাঁঠাল ২০-৩০টাকা আর বড় আকারে কাঁঠাল ৪০-৫০টাকা দামে বিক্রি হয়।

দীঘিনালা চাঙমা সাংস্কৃতি গোষ্ঠির পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা‘র স্ত্রী সোনাবী চাকমা(জেকি) বলেন, পাহাড়িদের কাছে খুব জনপ্রিয় ও সুস্বাধু খাবার হচ্ছে কাঁচা কচি কাঁঠালের সবজি। চিংড়ি মাছ অথবা চিংড়ি শুটকি দিয়ে রান্না করা হয় কাঁঠালের তরকারি। আমাদের সর্বচেয়ে বড় উৎসব বিজুতে পাঁচন তৈরিতে কাঁচা কাঁঠাল ছাড়া হয় না। ১০১ধরনের শাক-সবজি দিয়ে পাঁচন তৈরি করি এখন অধুনিকতার ছোয়া এসেছে। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে বিরিয়ানি, কাবাবসহ নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হচ্ছে।

মর্জিনা বেগম ও হেনা আক্তার বলেন, আমরা আগে পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তিতে কাঁচা কাঁঠালসহ অনেক শাক-সবজি এক সাথে করে রান্না করে খেতাম। তবে এখন মাঝে মধ্যে শুটকি দিয়ে কাঁচা কাঁঠালের সবজি রান্না করে খাই। তবে খবরে দেখছি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কাঁঠাল দিয়ে বিরিয়ানি, কাবাব আরো অনেক ধরনের মুখোরোচক খাবার তৈরি করা যায়। এখন থেকে আমরা রমজান মাসে এসব খাবার তৈরি করে খাব।

দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শাহাদাৎ হোসেন বলেন, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমান মিটামিন এ, থায়ামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিস্ক। এছাড়া কাঁঠালে প্রচুর পরিমান আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে চর্বির পরিমান নিতান্ত কম। কাঁচা এবং পাঁকা কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থের জন্য খুবই ভাল।

এখন পাহাড়ে ঢালুতে ব্যাপক হারে কাঠাল চাষ করা হচ্ছে। কাঠাল বাংলাদেশের পাহাড়ি অ লে চাষাবাদের জন্য বেশি উপযোগী। আমাদের দেশে পার্বত্য জেলাসমূহ রাঙামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও নরসিংদী জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাঠালে’র চাষ করা হয়।

পুষ্টিমানের দিক দিয়েও কাঠালে’র গুরুত্ব অপরিসীম। আনারসে ভিটামিন এ.বি.ও সি-এর উৎস। বসতবাড়ির আশে পাশে খালি জায়গাতেও আনারস চাষ করে সহজেই পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়।
পারিবারিক ভাবে কাঠাল চাষ করার গন্ডি পেরিয়ে কৃষকরা তাদের আয়ের উৎস হিসেবে প্রথমে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, এরপর খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় কাঠাল চাষ করতে কৃষকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে

পাহাড়ের ঢালে মাটি কুপিয়ে ঠিক এই মৌসুমে কাঠাল চারা রোপন করে সঠিক নিয়মে বন জঙ্গল তথা আগাছা মুক্ত রেখে এবং সার ওষুধ প্রয়োগ করে কাঠাল চাষ করে কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী।

পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাঠাল ক্রয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে মোটামুটি ভাবে লাভবান হচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি সদর, মানিকছড়ি, মাটিরাংগা, ললক্ষাংছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলায় ব্যাপক হারে কাঠালে’র চাষ হচ্ছে।

কাঠাল চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমানে কৃষি বিজ্ঞান মতে কৃষকরা কাঠাল চাষ করছেন না এমনকি সার ও ওষুধ প্রয়োাগ সঠিক নিয়মে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে কৃষকদের প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সারের অপচয় হচ্ছে। রমজানের শুরুতে কাঠালে’র ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এবারে কাঠালে’র চাহিদা কম রয়েছে বলে কাঠাল চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তারা বলেছেন এভাবে কাঠালে’র দাম কম থাকলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে বলে জানা যায়।

খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি ও গুইমারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া পর্যায়ে পাহাড়ি ও বাঙালি কৃষকগণ ব্যাপক হারে আনারস চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গুইমারা উপজেলার হাতীমুড়া, মধ্যহাফছড়ি, কালাপানি, বড়পিলাক, পথাছড়া, সিন্দুকছড়ি ও বাইল্যাছড়ি এবং মানিকছড়ি উপজেলার মলঙ্গীপাড়া, লাপাইদং, গাইদং, হরবিল, গ”ছাবিল, জামতলা, গভামারা, ওসমান পল্লী, উত্তর ডলু পাড়া, তবলা পাড়া, থলি পাড়া, ফকিরনালা, ডেপুয়া পাগা, মনাছড়ি কইবাং ও এয়াতলং পাড়া প্রভৃতি এলাকায় আনারস চাষের ব্যাপক সমারোহ পরিলক্ষিত হয়।

হাতীমুড়ার কাঠাল চাষী মো: আরিফুল ইসলাম বলেন-আমরা কাঠাল চাষ করে আসছি। ঝুঁকি আছে বাজার মূল্য সঠিক ভাবে না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এ বার সঠিক বাজার মূল্যে পেলে লাভবান হওয়ার সম্ভবনা আছে, আশা করি কাঠাল চাষীরা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

আরেক কাঠাল চাষী মো: শাহাদাৎ হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান বৃষ্টি না হওয়ায় কাঠালে’ ফলন একটু মন্থর তারপরও আমরা কাঠাল চাষীরা ভালো ফলন আশা করি। ফলনে পাকা আসতে রমজান মাস এসে যাবে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাহাড়ে কাঠালে চাষীদের ব্যাপারে কাঠাল চাষ সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করলে কৃষকরা কাঠাল চাষ লাভবান হবে বলে অভিজ্ঞ কৃষকরা মতামত প্রকাশ করেছেন। কৃষকদের সীমাহীন শ্রমের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে এদেশের বিশাল অর্থনৈতিক।

বাংলাদেশের কৃষি আর কৃষকদের কথা বাদ দিলে এদেশের অর্থনীতিকে অস্বীকার করা হয়। শুধু দেশীয় অর্থনীতিতেই কৃষকদের ভূমিকা সমাপ্ত নয়, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও আছে কৃষকদের অতিগুরুত্বপূর্ণ অবদান।