তালাক দিতে চাওয়ায় থানার ভেতরেই আত্মহত্যার চেষ্টা!

লালমনিরহাটে স্বামী তালাক দিতে চাওয়ায় ক্ষোভে থানার ভেতরেই বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন (২৩) নামে এক গৃহবধূ।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে আদিতমারী থানায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

সাবিনা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ি এলাকার রুবেল মিয়ার স্ত্রী এবং একই উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি ভেটেশ্বর গ্রামের ইসলাম মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রথম স্ত্রী থাকাবস্থায় সাবিনাকে দুই বছর আগে বিয়ে করেন রুবেল। দুই স্ত্রীর কারণে প্রায়ই তাদের সংসারে বিবাদ লেগে থাকত। অবশেষে কৌশলে দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনাকে তার বাবার বাড়িতে রাখেন রুবেল। বিবাদ এড়িয়ে চলতে বাবার বাড়িতে থাকলেও সাবিনার কোনো খোঁজখবর রাখতেন না রুবেল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বিশেষ আলাপ করতে আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের শিববাড়ি এলাকায় সাবিনাকে ডেকে নেন রুবেল। এ সময় তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষের পরিবারের উপস্থিতিতে আপাতত দুই পরিবার তাদের দুজনের দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় সাবিনা স্বামীর বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরেন। কিন্তু রাজি হননি রুবেল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে থানার বাহিরে এসে বিষ কিনে পুনরায় থানার ভেতরে ঢুকে শেষবারের মতো স্বামীর সঙ্গে যেতে তার অনুমতি প্রার্থনা করেন সাবিনা। কিন্তু তাকে বাড়িতে তো নয়, তালাকের প্রস্তাব দিলে স্বামী ও থানা পুলিশের সামনে বিষপান করেন সাবিনা।

বিষয়টি বুঝতে পেরে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ সাবিনাকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

হাসপাতালের বেডে থাকা সাবিনা বলেন, ‘দুই বছর সংসার করার পর যদি স্বামী তালাক দেওয়ার ঘোষণা দেন, তাহলে এই জীবন রেখে কী লাভ? তাই থানার ভেতরে স্বামী ও একাধিক পুলিশের সামনেই বিষ খেয়েছি মরার জন্য। কিন্তু পুলিশের কারণে মরতেও পারলাম না। স্বামী তালাক দিলে আমি আত্মহত্যা করব।’

রুবেল মিয়া বলেন, ‘আপাতত নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাকে তালাক দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার সঙ্গে যেতে না পেরে সাবিনা থানার ভেতরে আমার ও পুলিশ সদস্যদের সামনেই বিষপান করেছে।’

আদিতমারী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ দত্ত বলেন, ‘সাবিনা ইয়াসমিনের পাকস্থলী ওয়াশ করে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আপাতত শঙ্কামুক্ত।’

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, দুই পরিবার বসে বিবাদ নিষ্পত্তি করেছে বলে শুনেছি। এরপর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।