প্রতিমন্ত্রী পলকের নিকট শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নিকট খোলা চিঠি লিখেছেন আলাউদ্দীন আদর নামে রাজধানীর এক শিক্ষার্থী।

রোববার ঐ শিক্ষার্থী প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিটি তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন। আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য চিঠিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো :

মাননীয় মন্ত্রী,
আমরা জানি যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’র উন্নয়নে আপনি ও আপনার মন্ত্রণালয় ব্যাপক কাজ করছেন।আপনার নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রাম পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বিষয়ে কৌতুহলে করে তুলছে ।করছে নব সৃজনে আগ্রহি।

ঘন্টাখানেক আগে দৈনিক মানব জমিন অনলাইন সূত্রে জানলাম-‘ ঝিনাইদহে ফেসবুকের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্ট টাচ (posttouch.com) তৈরি করেছে আবরার নূর অর্ণব নামের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্র।

ওয়েবসাইটটি তৈরি করার পর কয়েক বার হ্যাক করে পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারায় মোবাইলে মুহূর্তে মুহূর্তে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছে হ্যাকাররা। জীবনের নিরাপত্তায় প্রায় ১ সপ্তাহ বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না স্কুলছাত্র অর্ণব ও তার পরিবার।

জানা যায়, ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব। পিতা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। থাকেন শহরের ব্যাপারীপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। ৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচারা শুরু করে। ইতিমধ্যে কম্পিউটার ও ওয়েব সাইট নির্মাণ নিয়ে অনেক কিছু শিখেছে সে।

১৬ই ডিসেম্বর থেকে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন ওয়েবসাইট তৈরির কাজে হাত দেয়। ১৮ এপ্রিল সে সফল হয়। নাম দেয় পোস্ট টাচ্ (posttouch.com)। নিজস্ব ডোমেইন কিনে লঞ্চ করে সাইটটি। ৬৪ জন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট খোলে। তৈরি করে পোস্ট টাচ্ (posttouch.com) নামের অ্যাপস। তার এই সাফল্য চোখে পড়ে হ্যাকারদের।

গত ২২শে মে প্রথম তার ওয়েবসাইট পোস্ট টাচ্ হ্যাক করা হয়। অনেক চেষ্টার পর তা উদ্ধার করা হয়। আবারো হ্যাক করা হয়। সর্বশেষ হ্যাকাররা এসকিউএল ইনজেকশন পুশ করে সব কিছু নষ্ট করে দেয়। এতেও দমেনি অর্নব। নতুন করে আবারো শুরু করে ওয়েবসাইটির কাজ। তবে বসে নেই হ্যাকাররা। অর্ণবের পিতা আবদুল আলিমের মোবাইল ফোনে মুহূর্তে মুহূর্তে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে হ্যাকাররা!

বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হলে বাড়িতে পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে তবুও আতঙ্কিত পরিবার। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না পরিবারের লোকজন। বন্ধ রয়েছে তার লেখাপড়া। অর্ণবের বাড়িতে কে বা কারা কখন আসছেন বা কখন যাচ্ছেন তা মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে জানাচ্ছেন হ্যাকাররা। আর নিয়মিত চলছে হত্যার হুমকি। এমনকি সংবাদকর্মীদের যাওয়া ও আসার বিষয়েও মেসেজ দিতে দেখা গেছে(!)

অর্ণবের বাবা আবদুল আলিম জানান, এই ঘটনার পর থেকে আমার পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। দ্রুত হত্যার হুমকিদাতা ও হ্যাকারদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, অর্ণবের পিতা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাননীয় মন্ত্রী,
‘আপনি নিশ্চয় জানেন-যে দেশ জ্ঞানী ব্যক্তিদের মর্যাদা দেয় না সে দেশে জ্ঞানী জন্মায় না।’ আমাদের দেশে বহু জ্ঞানীর জন্ম হয়েছে,তাহলে নিশ্চয় আমরা জ্ঞানীদের মর্যাদা দেই? কিন্তু মর্যাদা দিলেও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা (আর্থিক,সামাজিক,স্বাভাবিক মৃত্যুর) দিতে পারিনা। নয় তো এদেশে সেরা মেধাগুলোর অধিকাংশ পাচার হয়ে যায় কেন?

আপনার সম্পর্কে যতটুকু জানি,আপনি তরুণ বান্ধব ,দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশ্বাসী,সৃজনশীল তরুণদের প্রেরণার বাতিঘর,দেশ প্রেমিক।তাই ব্যাক্তিগত ভাবে মহাজোটের মন্ত্রীদের মধ্যে আপনাকে বেশি পছন্দ করি।

আবরার নূর অর্ণব একজন সম্ভাবনাময় সৃজনশীল কিশোর।এই বয়সে সে ফেসবুকের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘পোস্ট টাচ’ (posttouch.com) তৈরি করেছে !আমার বিশ্বাস,এই ক্ষুদে ওয়েবমেকার কে প্রমোট করলে,সার্বিক সহায়তা দিলে এইদেশের উপকার বৈ ক্ষতি হবেনা।

আবরার নূর অর্ণবের নিরপত্তার দায়িত্ব সরকারের।সরকার সে দায়িত্ব পালন করছে,করবে।যে বা যারা এই সম্ভাবনাময় তরুণকে অব্যহত হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা আর যাই হোক এদেশের ভালো চায় না।

আমাদের দাবী-অনতিবিলম্বে হুমকি দাতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।নির্ভয়ে অণর্ব যেন দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হোক।
আমরা এই বিষয়ে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিনীত

আলাউদ্দিন আদর
শিক্ষার্থী
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক।
ঢাকা