বিএনপি নেতা আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপন নাটক? ফোনালাপ ফাঁস!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে-এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে তোলপাড় চলছে। তার স্ত্রী তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছে, তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর সোমবার আবু আসিফের বিষয়টি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।

আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) উপনিবাচনে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও এই আসন থেকে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বহিষ্কৃত নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আবু আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। কদিন থেকেই আবু আসিফ অভিযোগ করে আসছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। তার নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছিল। তবে এর মধ্যেও তিনি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। গত ২৬ জানুয়ারি আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাত থেকে তার শ্যালক ও নির্বাচন পরিচালকারী কমিটির প্রধান সমন্বয় শাফায়েত হোসেন (৩৮) নিখোঁজ রয়েছেন। ওইদিন রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন তার প্রধান নিবাচনী এজেন্ট মুসা মিয়াকে (৭৫)। যদিও পুলিশ বলেছিল মারামারির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত রবিবার আশুগঞ্জে খবর ছড়িয়ে পড়ে আবু আসিফ নিখোঁজ। তার স্ত্রী মেহেরুন্নিছা জানান, গত দুই দিন ধরে আমার স্বামী ঘরে ফিরেনি। আমাদের লোকজনও ভয়ে থাকছে। এজেন্ট নিয়োগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। কাজের লোক এলেও ছবি তুলে রাখে, ভিডিও করে রাখে। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা একজনকে জয়ী করবে এটি আগেই বললেই তো পারে। কেন আমাদের এত টাকা খরচ করাল? আমার ছোট ভাইকেও বুধবার থেকে পাচ্ছি না। মেহেরুন্নেছা বলেন, আমার স্বামী আত্মগোপনে যাননি। এ বিষয়ে থানায় বা কোথাও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমিও ভয়ের মধ্যে আছি। দ্রুত একটা কিছু করব।

তবে আবু আসিফ নিখোঁজ হবার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিফের স্ত্রী এবং বাসার কেয়ারটেকারের মাঝে ফোনালাপ বলে একটি অডিও ফাঁস হয়। যেখানে আসিফের স্ত্রী হিসাবে বাড়ির কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামা কাপড় গোছানোর জন্য নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেখানে একটি নারী কণ্ঠ, ‘ইউসুফ (কেয়ারটেকার) স্যার কই, স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামা কাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন খুলবে।

এমন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি নেতা আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে গিয়েছেন এ নিয়ে আলোচনা আরো ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর থেকে সোমবার সারাদিন ফোন করলেও আসিফের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেননি। আসিফের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

আসিফের ভাতিজা ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বলেন, আমি সাত্তার সাহেবের (কলার ছড়ি) নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। চাচা আসিফের বিষয়ে কিছুই জানি না। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (১) এম. এম. তোফায়েল আলী রুবেল বলেন, আসিফ নিজেই আত্মগোপন করে নাটকের জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনে আলোচনায় থাকবার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান বলেন, আবু আসিফের বিষয়ে তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। আমরা তার বাসায় যাইনি বা আশে-পাশে ঘুরাফেরাও করছে না কেউ।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপ শুনতে এখানে ক্লিক করুন