মাদারীপুরে যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন

মাদারীপুরের সদর উপজেলার দক্ষিণ দুধখালী এলাকায় যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে।

গত রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যৌতুকের জন্য কেয়া আক্তার (২২) নামের গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়। এমন অভিযোগ উঠেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এতে গুরুতরভাবে আহত কেয়াকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার দেওয়া হচ্ছে। আহত কেয়া মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ দুধখালী এলাকার হিরু সরদারের মেয়ে। সে একই এলাকার ইতালী প্রবাসী রিপন মোল্লার স্ত্রী।

ভুক্তভোগী ও স্বজনরা জানান, গত ৩ বছর আগে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর কেয়া ও রিপন মোল্লার পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়। রিপন মোল্লা বিয়ের ৬ মাস পর ইউরোপের দেশ ইতালীর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। স্ত্রী কেয়ার সাথে ইতালী যাওয়ার পরে ২মাস যোগাযোগ রেখেছিলেন। যোগাযোগ আসতে আসতে কমিয়ে দেওয়া শুরু করে রিপন মোল্লা। এদিকে একটি মেয়ে সন্তান কেয়ার কোল জুড়ে জন্ম নেয়। মেয়ে হওয়ার খবর শুনে রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরপর হতে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় স্ত্রী কেয়ার সাথে।

এদিকে শশুর বাড়ির লোকজন কেয়ার উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করতে থাকে। চাপও দিতে থাকে তারা যৌতুকের জন্য, এক পর্যায়ে মেয়ের সুখের কথা ভেবেই কেয়ার বাবা হিরু সরদার ৫ লাখ টাকাও তুলে দিয়েছিল মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজনের হাতে। টাকা নেওয়ার পরে আবারো তারা টাকার দাবি করে। এই বিষয় নিয়ে গতকাল কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কেয়াকে তার শশুর আব্দুল হাই মোল্লা, শাশুড়ী আবেরজান বেগম ও মেজো ভাসুর মৃণাল মোল্লা মারধর করেছে।

পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। এ ঘটনার পরে কেয়ার পরিবার মাদারীপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

আহত কেয়া আক্তার বলেন, আমার মেয়ে হাফিজা হওয়ার পর থেকে আমার স্বামী রিপন মোল্লা আমার সাথে আর যোগাযোগ করেন না। আমার শশুর বাড়ির লোকজন বার বার টাকা চায় আমার পরিবারের কাছে। আমার বাবা কয়েকবার টাকাও দিয়েছে। এখন তারা আরো টাকা চাইলে আমি না করায় আমাকে মারধোর করে। তারা বলে আমাকে নাকি আমার স্বামী তালাক দিয়ে দিয়েছে। তালাক দিয়ে থাকলে আমার কাছে তো কোনো নোটিশ আসেনি।

রবিবার আমি এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমার শশুর, শাশুড়ী আর মেজো ভাসুর আমাকে প্রচুর মারধোর করে। আমার মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ভুক্তভোগী কেয়ার ছোট কাকা রবিউল সরদার বলেন, বিয়ের পর রিপন বিদেশে চলে যাওয়ার পর থেকেই আমার ভাইঝি কেয়ার উপর নির্যাতন চালায় শশুরবাড়ির লোকজন। তারা শুধু বার বার যৌতুক চায়। যৌতুক না দেওয়ায় এখন কেয়াকে গ্রহণ করতে চায় না। গতকাল আমার ভাইঝিকে অনেক নির্যাতন করেছে। আমরা আইনের কাছে বিচার দাবি করি।

ঘটনার পর থেকে আব্দুল হাই মোল্লা, আবেরজান বেগম ও মৃণাল মোল্লা পলাতক থাকায় ও তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।