মোস্তাফিজদের খেলিয়ে লাভ কি? প্রশ্ন লেম্যানের!

টেস্ট, ওয়ানডে কি টি-টুয়েন্টি; সব সংস্করণেরই ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া দলের মূল শক্তি পেস ব্যাটারি। হোক না উপমহাদেশের উইকেট তাতেই বা কি? বরাবরই পেসারদের উপর আস্থা রেখেছে তারা। সেই অস্ট্রেলিয়া এবার ইনজুরি আক্রান্ত জস হ্যাজলউডের পরিবর্তে দলে নিয়েছে স্টিফেন ও’কিফকে। ফলে ১৪ সদস্যের অসি দলে এখন মাত্র দুইজন বিশেষজ্ঞ পেসার। গুঞ্জন, চট্টগ্রাম টেস্টে খেলবেন একজনই। সিরিজের আগে বাতিল খাতায় ফেলা ও’কিফকে উড়িয়ে আনার যুক্তি টানেন অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ ড্যারেন লেম্যান। সেখানে উঠে আসে বাংলাদেশি পেসারদের প্রসঙ্গ। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, বাংলাদেশের পেসাররা ঢাকার প্রথম টেস্টে কয় ওভারই বা বল করেছে? তাদের খেলিয়ে কি লাভ হয়েছে? তিনি যা বলছেন, তাতে স্পিনাররাই যে পরের টেস্টেও মূল ভূমিকা পালন করবে তা পরিষ্কার।

সিরিজে ১-০তে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্ট হেরেছে ২০ রানে। বাংলাদেশে এসে তারা নিজেদের ফেভারিট ঘোষণা না করলেও সাড়ে তিনদিনে ম্যাচ হেরে যাবেন তা নিশ্চয়ই ভাবেনি! তাই চট্টগ্রাম টেস্টে জয় তুলে সমতায় ফিরতে মরিয়া অসিরা। তবে তার আগে আলোচনায় কেমন হবে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের জন্য তাদের একাদশ। হ্যাজলউডের জায়গায় একাদশে ঢুকবেন কে? প্যাট কামিন্স প্রথম ম্যাচ খেলেছেন। দলের দ্বিতীয় বা ব্যাক আপ পেসার হিসেবে আছেন জ্যাকসন বার্ড। তবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটেও স্পিনারদের এগিয়ে থাকার কথা। বাঁহাতি ও’কিফ ছাড়াও দলের আছেন লেগ স্পিনার মিচেল সয়েপসন। সয়েপসনের এখনো টেস্ট অভিষেক হয়নি। ৮ ম্যাচের অভিজ্ঞতা ৩২ বছরের ও’কিফের। শেষ সফরে ভারতে প্রায় একা হাতে একটি ম্যাচ জিতিয়েছেন। প্রশ্ন এখন, ও’কিফ না সয়েপসন, কাকে বেছে নেবেন স্টিভেন স্মিথরা? নাকি কামিন্সের সাথে যোগ হবেন বার্ড?

এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে লেম্যান উল্টো প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন মিরপুর টেস্টের উদাহরণ টেনে, ‘বাংলাদেশের পেসাররা কয় ওভার বল করেছে (দ্বিতীয় ইনিংসে)?’ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১ ওভার বলে করেছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, দিয়েছেন ৮ রান। শফিউলতো বলই পাননি। প্রথম ইনিংসে দুই পেসার মিলে করেছেন ১৪ ওভার। দুজনই ম্যাচে থেকেছেন উইকেটশূন্য। তাই আবারো প্রশ্ন করে বসেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ-নির্বাচক লেম্যান, ‘পেসারদের খেলিয়ে কি লাভ হয়েছে?’ এরপর যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘উইকেটের যেমন আচরণ, ম্যাচ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনি খুব বেশি ওভার পেসারদের দিয়ে করাতে পারবেন না।’

সরাসরি না বললেও চট্টগ্রাম টেস্টে তিন স্পিনার খেলানোর ইঙ্গিতই তো দিলেন লেম্যান, ‘আমরা (চট্টগ্রামেও) একই রকম উইকেট আশা করছি। এবং এটা ঠিক আছে। এবং এটাই আমি এখানে আশা করি। দেখি কি হয়।’ সেক্ষেত্রে উপমহাদেশে সফল ও’কিফের দলে থাকার সম্ভবনাই বেশি। ভারতে ৪ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট। তবে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে পরিবর্তন হতে পারে আরও। মিরপুর টেস্টে পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন উসমান খাজা ও ম্যাথু ওয়েড। তাদের যে কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে গুজন উঠেছে। তাই একাদশে ঢুকতে পারেন হিল্টন কার্টরাইট। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বল করেন তিনি। সেক্ষেত্রে পেসার প্রয়োজন হলে হাত ঘোরাবেন এই অল রাউন্ডার। যদিও খাজার মতো ক্লাস ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়ার বিরোধী অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি সাবেকরা। আবার ওযেডের হাত থেকে পার্ট টাইমার কিপার পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে গ্লাভস জোড়া দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সেটা অধিনায়ক স্মিথ ডারউইনেই বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য তো কতো কিছু বদলাতে পারে, নতুন রণকৌশলের দিকে যাওয়া যেতেই পারে! অস্ট্রেলিয়া যে বড় সংকটে!

প্রসঙ্গত, এর আগে গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ তাতে ১-১ এ ড্র হলো। সেবার ওই জয়ের আগে চট্টগ্রাম টেস্টে খুব কাছে গিয়ে হারতে হয়েছিল টাইগারদের। সেখানে দুই পেসার খেলেছিলেন। কিন্তু মিরপুরে ফিরে এক পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল স্বাগতিকরা। আর তাতে সাফল্যও পায় দলটি। প্রথম ইনিংসে ৩ ওভার বল করে উইকেটশূন্য কামরুল ইসলাম রাব্বি দ্বিতীয় ইনিংসে বল করার সুযোগই পাননি। তাহলে কি বাংলাদেশের দেখিয়ে দেওয়া পথেই হাঁটতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া? ৪ সেপ্টেম্বর শুরু শেষ টেস্ট।