সংবাদকর্মীর ফেইসবুকে ছবি দেখে সংগ্রামী বুড়ি হেমরমের বাড়ীতে ছুটে গেলেন ইউএনও

অভাবের তাড়নায় মানুষের কাছে হাত না পেতে শাক পাতা কুড়ানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়া বুড়ি হেমরম (৭১)। তিনি পুকুর পাড়, জমির ড্রেন, কৃষি জমি হতে বিভিন্ন জাতের সবুজ শাক ও শাক পাতা সংগ্রহ করেন এবং কখনও পায়ে হেটে আবার কখনও ভ্যানে চেপে ৪ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে বীরগঞ্জ পৌরবাজারে সংগৃহিত শাক ও শাকপাতা বিক্রি করেই সংসারের খরচ চালান।

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-ত্বাত্তিক গোষ্ঠীর বাসিন্দা বুড়ি হেমরমের স্বামী পালু মুরমু ৬ বছর আগে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় সকল প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে শাকপাতা কুড়ানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

সহায় সম্পদ বলতে ছিন্ন কুটির আর বসত ভিটা আর কিছুই নাই। পরিবারে এক ছেলে ও চার মেয়ে তার। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে বুদু মুরমু বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন এবং ছেলের সংসারে থাকেন তিনি। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার উর্ধগতিতে সংসারে বাড়ছে টানাপোড়া। ছেলের একার উপার্জনে সংসার চালাতে দিন দিন বাড়ছে দেনা।

অভাব অনটন যেন লেগেই থাকছে সংসারে। এ সব থেকে মুক্তি পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কঠোর সংগ্রামে নেমে পড়েন বুড়ি হেমরম।

শুক্রবার প্রচন্ড কনকনে শীত উপেক্ষা করে শরীরে একটি মাত্র চিন্ন চাদর পেচিয়ে অভাবের তাড়নায় পৌর বাজারে শাক বিক্রয় করতে আসলে স্থানীয় তরুন সমাজ সেবক ও সংবাদ কর্মী সোহেল আহমেদ বুড়ি হেমরমের ছবিসহ বিষয়টি তার ফেইসবুকে পোষ্ট করেন। ফেইসবুকে ছবিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে এলাহীর দৃষ্টি গোচর হয় এবং তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে বুড়ি হেমরমের বাড়িতে ছুটে যান। এ সময় তিনি শীত নিবারণের জন্য পরিবারটি কম্বল এবং থাকার জীর্ণ ঘরটি মেরামতের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হঠাৎ করে তার বাড়ীতে এমন পরিস্থিতি আবেগপ্লুত হয়ে বুড়ি হেমরম বলেন, জীবনের শেষ বেলায় ইউএনও দেখা পাইছি। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে এলাহী বলেন, এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আমাদের সমাজে অনেক অসহায় মানুষ আছে যাদের খোঁজ আমরা জানি না বলেই তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি না। সমাজের সকলেই যদি তাদের পাশে দাঁড়াই এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে তাদের কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব হবে।