সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে ২মামলায় এমপির এপিএসসহ দেড়শতাধিক আসামী, আটক-১

সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধর এবং ইউপি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের ব্যক্তিগত সহকারী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে।

এঘটনায় হাসানুর হক রিপন (৩৫) নামের এক জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সে রাজাপুর উত্তরপাড়ার সামছুল আলমের ছেলে।

বুধবার (২২ মার্চ) রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে একটি এবং রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ বাদী হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন হাসান রকিসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করে অপর মামলাটি দায়ের করেন। উভয় মামলায় এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল সমর্থিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারপিটের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলা দুটির তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে রিপন নামের একজনকে আটক করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় এমপি আব্দুল মমিন সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন হাসান রকি ও তার লোকজন ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলেন।

এসময় প্রিজাইডিং অফিসারকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এরপর পাশেই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত এবং ইউপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন তারা। অপরদিকে নির্বাচন পরিদর্শনে যাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আকন্দ, ইউপি সদস্য আশরাফ মণ্ডলকে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকারের নির্দেশে মারপিট করা হয়।

মামলার বাদী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, মঙ্গলবার রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আমন্ত্রণে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন পরিদর্শনে আমরা যাই। বিদ্যালয়ের দোতলায় বুথ বানিয়ে ভোটগ্রহণ চলছিল। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও একই বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীণ নেতা শাহজাহান আলী সরকার এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিন হাসান রকি। ভোট শেষ হওয়ার পর একজন ভোটার এসে রকিকে তার পরাজয়ের খবর দিলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এসময় এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ বহিরাগত ৫০/৬০ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিত করে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে ব্যালট ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর নিচ তলায় দাঁড়িয়ে থাকা ইউপি সদস্য আশরাফুল আলমকে বেদম মারপিট করেন তারা। আশরাফুলকে উদ্ধার করতে আমি এগিয়ে গেলে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকারের নির্দেশে রবিন হাসান রকিসহ বেশ কয়েক জন আমাকেও মারধর করেন। পুরো সময় জুড়ে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।

অপর মামলার বাদী ইউপি চেয়ারম্যান সোনিয়া সবুর আকন্দ বলেন, রবিন হাসান রকির নেতৃত্বে এমপি সমর্থিত একদল সন্ত্রাসী আমার পরিষদে হামলা চালিয়েছেন। তারা আমাকে মারপিট করে এবং অফিস ভাঙচুর করেন।

এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের ব্যক্তিগত সহকারী সেলিম সরকার বলেন, সভাপতি নির্বাচনের আগে আটজন ভোটারকে ডেকে নিয়ে দোতলায় যান শিক্ষা কর্মকর্তা। সেখানে ভোটগ্রহণের পর গণনার আগেই কেউ উপরে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে গেছেন। এসময় মোহাম্মদ আলী আকন্দ নিচ থেকে গালি গালাজ করেন। তখন ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করেন। তবে ঘটনার সময় আমি বাইরে চলে এসেছি।