তেঁতুলিয়ায় একের পর এক লিখিত অভিযোগের পরেও বহাল তবিয়তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার নাওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুকের বিরুদ্ধে একের পর এক লিখিত অভিযোগ করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন কর্মঘন্টা। বহাল তবিয়তের এই কর্মঘন্টার পর থেকেই অনিয়ম—দুনীর্তি করতে মোটেও দ্বিধাবোধ কনের না ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন। আর এই কর্মঘন্টার পিছনে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখ বিদ্যালয় পরিচালনা আইন অমান্য করে যেমন খুশি নিজ ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করা, অসময়ে বিদ্যালয়ে আগমন, বিদ্যালয়ের অপ্রয়োজনীয় কাজে দিগ্বিদিক ছোটাছোটি করা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবমাননা করা, যথারীতি ক্লাস পরিচালনা না করা, বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ অপব্যহার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে বদলীর আবেদন করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরোয়ার হোসেন। ম্যানেজিং কমিটি অভিযোগের কোনো ফলাফল পাননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর গত ২০২১ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখ বিদ্যালয়ের প্রায় ১০০/১৫০ কেজি পরিমানের লোহার এঙ্গেল চুরি করে বিক্রি করার অপরাধে ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর পক্ষে তৎকালীন সভাপতি আনোয়ার হোসেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবারও একটি অভিযোগ আনায়ন করেন। এর পরেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কোনো পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধানের অনিয়ম—দুনীর্তি রামগতিতে বেড়েই চলছে।

শুধু কি তাই, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে ওই বিদ্যালয়ের মাঠে অবস্থিত সরকারি বড় ১টি কাঁঠাল গাছ উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন ও টেন্ডার পত্র ছাড়াই লোক নিয়ে কর্তন করে সকলের দৃষ্টির অগোচরে উহা বিক্রয় করে উহার টাকা আত্মসাত করেন। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিক তরিকুল পেশাগত দায়িত্ব পালনে গত আগস্ট মাসের ৬ তারিখে বিদ্যালয়ের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থিত লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তাঁর মোবাইলে গাছ কাটার পরবতীর্ স্থির চিত্র ধারণ করেন। এরপর সাংবাদিক তরিকুল ওই বিদ্যালয়ের প্রধানের নিকট গাছ কাটার বিষয়ে আইনগত ভিত্তি/মতামত জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোন সদোত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি বলেন, আমি যা করব সভাপতি তাই মেনে নিবেন। তিনি আরোও বলেন, গাছটি ৫হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পরে গাছ ব্যবসায়ী তাকে ৪হাজার ৭০০টাকা দিয়েছেন।

সাংবাদিক তরিকুল সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং ইউএনও মহোদয় ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং দৈনিক পত্রিকায় “পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্কুল মাঠের গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক” শিরোনামে নিউজ প্রদান করেন এবং তাহা প্রকাশ হয়। পরবতীর্তে নিউজের জের ধরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক তরিকুলকে রাস্তার গতিরোধ করে তাকে প্রাণ নাশের হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মারধর ও সাংবাদিকতার স্বাদ মিটিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। এরই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিক তরিকুল চলতি বছরের গত আগস্ট মাসের ১২ তারিখ সাধারন ডায়েরী (জিডি) করেন এবং ১৩ তারিখ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত সাপেক্ষে দেখার জন্য প্রেরণ করেন। এরপর শুরু হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মূলমন্ত্রের যাদু। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত আসতে না আসতেই বিক্রি যাওয়া গাছ বিক্রি হয়নাই প্রমাণ করাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাতারাতিই একটি গাছ বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন এবং ম্যানেজিং কমিটিকে মেনেজ করে ফেলেন। অথচ ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান ১০ মিনিটের বক্তব্যে স্পষ্ট বলছেন তিনি গাছ বিক্রি করছেন ৫হাজার টাকায় গাছ ব্যবসায়ী গাছটি নেয়ার পর কান্দামুন্দা পরে গাছটি ফাড়াই করে দেখেন ২৮মন খড়ি হয়। ২৮মন খড়ি ১৫০ টাকা করে ৪হাজার ৭০০ টাকা তাকে দিয়েছেন। অপরদিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গাছটি পড়ে থাকতে দেখেন এখন গাছটির লক দেখা যাচ্ছেনা, গাছটি কখন বিক্রি করেছেন তাও তিনি জানেন না এবং এর কোনো রেজুলেশন করা হয়নি জানিয়েছেন।

সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে কতিপয় সংবাকমীর্কে ভুল বুঝিয়ে তাঁর নিউজকে মিথ্যা অপপ্রচার বলে সংবাদ পরিবেশ করিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত ও আইন বহির্ভুত সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিনি আরোও বলেন, তাঁর (সাংবাদিক তরিকুল) নিউজের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজেকে অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে নেয়ার জন্য রাতারাতিই একটি ভিন্ন গাছ তদন্ত অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটিকে দেখিয়েছেন। যার আসল প্রমাণ তাঁর বক্তব্যই রয়েছে। এদিকে কোনো রেজুলেশন করা হয়নি বা ছিলনা সেই প্রমাণও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বক্তব্য ও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট রয়েছে। তিনি আরোও জানান, যেখানে শিক্ষা অফিসার বরাবরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে কথা বলে সেখানে তদন্ত প্রতিবেদন কি হতে পারে তা আর জানার প্রকাশ রাখে না।’

এ ব্যাপারে তদন্তপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আনোয়ার সাহাদৎ সাংবাদিক তরিকুলকে নিয়ে বসার কথা জানিয়েছেন।