দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মানববন্ধন

ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে দক্ষিণ পলাশবাড়ি ভাটা’র মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

মানববন্ধন চলাকালে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে, বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মোঃ আজিজুর রহমান।

সোমবার (৩১ মে) ২০২১ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইটভাটার কারণে বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মানববন্ধন করেছেন। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মোঃ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, জেলা সম্পাদক আনোয়ার আলী সরকার, বাংলাদেশ কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতির জেলা সভাপতি আখতার আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা সঞ্জিত প্রসাদ জিতু, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মাসুদ রানা, সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন, নীলফামারীর বাংলাদেশ কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতির নেতা শফিকুল আলম, সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ফাত্তানুর, এরশাদ, নাজমা বেগম, আফরাজুল রহমান আপন, মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে গেছে ফসল। এক ইউনিয়নে ১৯ ইটভাটার কারণে ৩০০ একর জমির আম ও ধানসহ ৩০ প্রকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ইউএনও বরাবর ৩ শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি গত ২৩ মে দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে ২৩৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা। কিন্তু প্রশাসন শুধু কয়েকটি ভাটায় নাম মাত্র জরিমানা করে ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস-ই দিয়েছেন। এখোনো কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন’নি। প্রশাসন কেবল ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে বসে আছেন। কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এখোনো কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন’নি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১৩ ও ১৫ মে ভোরে হামিদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার এআরবি ব্রিকস, একে ব্রিকস, সোহাগী ব্রিকস, অর্ণব ব্রিকস, একতা ব্রিকস ও জহুরা ব্রিকসের ছেড়ে দেয়া বিষাক্ত গ্যাস পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই মৌজার ৩০০ একর জমির ধান, ৫০টি লিচু বাগান, আম বাগান, বাঁশ ও কলা, নারিকেল, জলপাই, পেয়ারা, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এলাকার প্রায় ২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, ইটভাটার কারণে দিন দিন আমরা নিঃস্ব হচ্ছি। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে যাচ্ছে। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পঁচে ঝরে পড়ছে বাগানের আম, বিভিন্ন ফল, বাঁশ ঝাড় পুড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার ছয়টি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় এই এলাকার ধান পুড়ে গেছে এবং বাড়ির চারপাশের আম, লিচু, পেয়ারা, জলপাই, কাঁঠাল ও অন্যান্য গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ফলগুলো ঝরে পড়ছে। ৫০টি বাগানের আমের নিচের অংশ পচে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। বাগানের আমগুলো বর্তমানে বিক্রির অনুপযোগী।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রতিবছর এই এলাকার ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এ বছর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। আগামীতে যেন এ ধরনের ক্ষতির মুখে না পড়ি সে ব্যাপারে সরকারের কাছে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নাশিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।