দেড় মাসেও স্বাভাবিক হয়নি জীবনযাত্রা

দেড় মাসেও স্বাভাবিক হয়নি রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে এখনও দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মেরামত নিয়ে তোড়জোড় চালানো হলেও অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। রক্ষা করা যাচ্ছে না মেরামতের কাজ। টেকানো যাচ্ছে না স্থায়ীত্ব। বৃষ্টি হলেই ফের সরে যাচ্ছে মাটি। পাহাড়ের মাটি ধসে রাস্তার ওপর জমছে কাদার স্তুপ। ধসে যাচ্ছে মেরামত কাজের অংশগুলো। ফলে একের এক বাড়ছে সংকট। বাড়ছে মেরামত কাজ।

অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাস্তা মেরামতের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকা চেয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাঙামাটি অফিস। এ অবস্থায় বৃষ্টিপাত শেষ না হলে স্থায়ীত্ব নিয়ে পুরোদমে সড়কগুলোর মেরামত সম্পাদন সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এলজিইডি রাঙামাটি বিভাগ জানায়, অতিবৃষ্টির কারণে ১৩ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে রাঙামাটি জেলায় অভ্যন্তরীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে এ জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

প্রধান প্রকৌশলীর তাৎক্ষণিক নির্দেশে এলজিইডি’র অধীন কাপ্তাই বাইপাস সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতুর জরুরি মেরামত কাজ করে হালকা যান চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হয়েছে। রাঙামাটি সদর হতে কাপ্তাই হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সংযুক্ত এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সেতু ও রাস্তা মেরামত করায় জনদুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত বৃষ্টিপাতে মেরামতের কাজ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আদনান আক্তারুল আজম জানান, কাপ্তাই বাইপাস সড়কের তাৎক্ষণিক জরুরি মেরামত কাজ করে এরই মধ্যে হালকা যান চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা সদর হতে কাপ্তাই আরঅ্যান্ডএইচ ভায়া বড়াদম ২৩ কিলোমিটার এবং সদর হতে তবলছড়ি আরঅ্যান্ডএইচ ভায়া বড়াদম ৫ দশমিক ৮০০ কিলোমিটার, কাউখালী সদর হতে ঘাগড়াবাজার সড়ক ৯ দশমিক ৬০০ কিলোমিটার, গোয়াইতল হতে সোনাইছড়ি সড়ক ৭ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার, জীবতলী জিসি হতে কাপ্তাই আরঅ্যান্ডএইচ ৫ দশমিক ২০০ কিলোমিটার, কাউখালী হতে সুগারমিল সড়ক ১২ কিলোমিটার ও বেতবুনিয়া হতে চেরীবাজার সড়ক ২৫ কিলোমিটার সড়কের বিধ্বস্ত রাস্তার মেরামত কাজ করা হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন রাস্তায় ধস, ভাঙন ও রাস্তার ওপর কাদা জমছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস চত্বরের বাউন্ডারি ওয়াল, কাপ্তাই উপজেলায় সদ্য নির্মিত ভূমহীন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা প্রভুধন চৌধুরীর বাসভবনসহ ৩২ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক ও রাস্তার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার ও ব্যবহার উপযোগী করতে ৫০ কোটি টাকার চাহিদাপত্র এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প বর্তমানে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায়। অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

বর্তমানে জেলার ১০ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। এরই মধ্যে কাপ্তাই বাইপাস সড়কে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে। যার সুফল জনগণ ভোগ করছে।

অপরদিকে কাপ্তাই বাইপাস সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পশ্চিম পাশে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণ করা জমির মাঝখানে একটি পাহাড়ে ব্যাপক ধস হয়েছে। কিন্তু পাহাড়টি অধিগ্রহণ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানান এলাকার মানুষ।

তারা বলেন, পাহাড়টি অধিগ্রহণভূক্ত করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনসহ পরিবেশ আরও উপযোগী হয়ে উঠবে। পাহাড়টির এপিঠ ওপিঠ সমান করা হলে পাশের জলাশয় ভরাট হয়ে পাহাড় ধসের ঝুঁকি আর থাকবে না। তাতে জমির আয়তনও বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে ব্যাপক বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। যা আজ পর্যন্ত পুরোপুরি সচল করা যায়নি।

মেরামতের পর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে হালকা যান চলাচল করতে পারলেও এখনও সরাসরি ভারি যান চলাচল উপযোগী হয়ে ওঠেনি সড়কটি। সম্প্রতি বৃষ্টিপাতে ধসের আশঙ্কায় হালকা যান চালুর সপ্তাহখানেক পরই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক। বান্দরবান অংশে একটি বেইলি সেতু তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে রাঙামাটি-বড়ইছড়ি-বাঙালহালি-বান্দরবান সড়ক যোগাযোগ।

এসব সড়কের মেরামত কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষগুলোকে। অব্যাহত বৃষ্টিতে ধস ও ভাঙনের কারণে এবং রাস্তার ওপর কাদা, জঞ্জাল জমে মেরামত সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-বড়ইছড়ি-কাপ্তাই, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান, রাণীরহাট-কাউখালী, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু এবং বাঙালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কের তত্ত্বাবধান ও মেরামত কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

এছাড়া এলজিইডি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ আলাদা আলাদা করে জেলার অভ্যন্তরীণ আরও রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধান করছে।