পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবৈধভাবে সার ডিলার লাইসেন্স ভাড়া; অভিযোগ কৃষকের

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবৈধভাবে বিসিআইসি সার ডিলার লাইসেন্স ভাড়া দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকায়। একই ব্যক্তির নামে একাধিক অনুমতিপত্র নিয়ে মাসচুক্তিতে ভাড়া দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ কৃষকসহ খুচরা সার বিক্রেতাদের।

ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও অতিরিক্ত মূল্য গুনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। আর কৃষকরা বলছেন, অসাধু ব্যক্তিদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বছরে হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনছেন তারা। এমনকি কৃষি বিভাগকে অবহিত করেও কোন সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

তবে কৃষকসহ খুচরা সার বিক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সরেজমিনে। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউপির সার বিক্রেতা সন্তোষ কর্মকার। প্রভাবশালী এক ব্যক্তির অনুমতি পত্র মাস চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘবছর ধরে সার বিক্রি করছেন তিনি। সরেজমিনে জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে অমোঘ স্বীকারোক্তি দেন এই বিক্রেতা।

জানান, তিনি মেসার্স কলাপাড়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি অনুমতিপত্র ভাড়া নিয়ে সার বিক্রি করছেন পাখিমারা বাজারে। আর এই অনুমতিপত্র প্রাপ্ত ব্যক্তিটি পটুয়াখালীর বাসীন্দা সাজবিন সিদ্দিকা পরশমনি। মূলত এই নারীর নামে অনুমতিপত্র নিয়েই ভাড়া দেন তার স্বামী রুহুল আমিন মুন্সি। তবে মাস চুক্তিতে কত টাকা ভাড়া দেয়া হচ্ছে তা জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে মৎস্যবন্দর আলীপুরেও একইভাবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে সার বিক্রির অনুমতি পত্র। মেসার্স শাহপরান টেডার্স নামের অনুমতিপত্রটির সত্বাধিকারী ছিলেন পটুয়াখালীর জৈনকাঠির বাসীন্দা মো. রতন তালুকদার। যিনি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে স্থানীয় খুচরা সার বিক্রেতাদের অভিযোগ, শাহপরান ট্রেডার্স নামে অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিটিও ছিলেন রুহুল আমিনের মামা। তিনি কখনো আলীপুরে আসেননি। এ লাইসেন্সটিও মাসচুক্তিতে ভাড়া দিতেন রুহুল আমিন।

লতাচাপলী ইউপির ২নং ওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতা রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, মূলত এই বিসিআইসি লাইসেন্সগুলো বিভিন্ন নামে নিয়ে মাস চুক্তিতে ভাড়া দেন প্রভাবশালী রুহুল-আমিন। যিনি কলাপাড়ার বাসীন্দা নয়। পটুয়াখালী থেকে স্ত্রী,মামাসহ একাধিক ব্যক্তির নামে অনুমতিপত্র নিয়ে ৩ থেকে চার লাখ টাকায় ভাড়া দেন তিনি। যার প্রভাব পড়ছে কৃষকদের উপরে।
সরকার নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

অপরদিকে ওই ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতা খলিল খাঁন জানান, ভাড়া দেয়া লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তি এখন জীবিত নেই। তবে ফের ওই ব্যক্তির পরিবারে অনুমতিপত্র নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন প্রভাবশালী রুহুল-আমিন। তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যাতে দুরের এসব মানুষকে আর যাতে অনুমতি পত্র দেয়া না হয়। লতাচাপলীতে অন্তত ১০জন রয়েছেন যারা অনুমতি পাওয়ার উপযুক্ত এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী। তাই এদের মধ্যে যে কাউকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে, এবিষয়ে প্রভাবশালী রুহুল-আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে অনুমতিপত্র অন্য লোক দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে দোষের কিছু নেই। তবে সন্তোষ কর্মকারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন জানালে তিনি পটুয়াখালীর একাধিক প্রবীন সাংবাদিকদের পরিচয় দিয়ে তার নাম রুহুল আমিন এটা মনে রাখার কথা বলেন তিনি। এছাড়া কলাপাড়ায় একটি সাংবাদিক সংগঠনে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে দাম্ভিকতার সাথে কথা বলেন। এমনকি কলাপাড়াতে একাধিক সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতার সাথে তার সখ্যতা রয়েছে বলে উল্লেখ করে নিউজ না করার লক্ষ্যে নিরিবিলি সময়ে সাক্ষাতের আহবান করেন তিনি।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, বিসিআইসি ডিলার লাইসেন্স ভাড়া দেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি অনুমতিপত্র ভাড়া দেয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।