যশোরের মণিরামপুরে হাজারো মোটরসাইকেল চালকরা পরিবার নিয়ে চরম কষ্টে

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের আতিয়ার রহমান, দিনের কিছু অংশ বিক্রি করেন খবরের কাগজ, বাকি সময়টুকু মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে কোন রকম সংসার চলে তার। লকডাউনে কারনেই মোটরসাইকেলে কোন আয় রোজগার নেই।

খড়িঞ্চী গ্রামের হাফিজুর রহমান শুধুমাত্র ভাড়ায় চালান মোটরসাইকেল। দু’চাকার পরেই তার পুরো সংসারটাই চলে। গত ক’দিন কোন ভাড়াপাতি না থাকায় চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে তারও।

একেতো রমজান মাস চলছে তারপরও সামনে আসছে ঈদ। এদের সকলেরই যেন স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়েই উপজেলার আট শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে। অপর দিকে অনেকের মাথায় চেপে বসেছে সমিতির কিস্তির টাকার টেনশান। সার্বিক মিলে চরম কষ্টে যাচ্ছে মণিরামপুরে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের।

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মণিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়কের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালক রেজাউল করিম, আকবার হোসেন, সুলতান পারভেজ, লিটন, শরিফুল ইসলাম, মোস্তফা ও মনিরুল ইসলামের সাথে।

তারা জানান, লকডাউনে যাত্রীবহন বন্ধ থাকায় চরম কষ্টে দিন কাটছে তাদের। যদিও অনেকেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হলেও কোন ভাড়াপাতি হচ্ছে না।

তাহেরপুরের মনিরুল ও মোস্তফা জানায়, অভাবের তাড়না এবং সমিতির কিস্তির জন্য ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হলেও কোন যাত্রী নেই রাস্তায়। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, মণিরামপুরের রাজগঞ্জ, খেদাপাড়া, বাঁকড়া, ঝিকরগাছা, খোর্দ, কলারোয়া, ত্রিমোহনী, রাজগঞ্জ-পুলেরহাট, যশোর, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, হেলাঞ্চী, ভান্ডারী মোড়, দূর্গাপুরমোড় এবং দোলখোলা সড়কে প্রায় এক হাজার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল রয়েছে। মাঠে কৃষি কাজের অভ্যাস না থাকায় অভাবগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালান তারা। একটি মোটরসাইকেলের দু’চাকার পরে সংসার চলে অনেকের। গত ক’দিন লকডাউন থাকায় যাত্রীবহনে কাজ করতে পারছেন না তারা প্রশাসনের চাপে। এসব চালকদের কেউ কেউ আবার ঝুঁকি নিয়ে বের হলেও কোন ভাড়া পাতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চালকরা।

উপজেলার রাজগঞ্জ সড়কে প্রায় ৩০০ খানা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চলে।

এ সড়কের চালক সমিতির সভাপতি মিন্টু এবং সেক্রেটারী শরিফুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল ভাড়া চালিয়ে সংসার চালায় এরপর সমিতির কিস্তিতো আছেই। লকডাউনের ফলে বাড়িতে বসে সময় পার করতে হচ্ছে। যে কারণে চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন প্রত্যেকটি পরিবার।

খেদাপাড়া সড়কের সভাপতি মশিয়ার রহমান ও সেক্রেটারী আসাদ অত্যান্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, করোনা পরিস্থিতির জন্য লকডাউন ঘোষণা দিয়েছেন সরকার। কিন্তু আমাদের মতো দিন-আনা দিন-খাওয়া গরীবরা সমিতির কিস্তি চালাবো কিভাবে, আর খাব কী?

নেহালপুর সড়কের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালক সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, সংসার চালানোর কোন উপায় নেই তার। তারপরও রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু ভাড়াপাতি (যাত্রী) না থাকায় কোন আয়-রোজগার হচ্ছে না।

ঢাকুরিয়া সড়কের ভাড়ায় চালক রবিউল ইসলামও একই কষ্টের কথা বলেন।

তবে এসব চালকরা সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা দাবী করে বলেন, আর কিছুদিন পরেই ঈদ, সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করেন, তাহলে ঈদ উপলক্ষে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের দু’মুঠো ভাত দেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন- উপজেলাধীন মোটরসাইকেল চালকরা সমষ্টিগত ভাবে আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলে সরকারের কাছ থেকে তাদের জন্য কিছু করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো এবং দ্রুত তাদের তালিকা করা হবে।