হাত না থাকলেও এবার সোনা জিততে চান বোঞ্জ জেতা এই ছেলেটি

এ বছর এপ্রিলে জয়পুরে জাতীয় প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতায় ৫০ মিটার ফ্রি–স্টাইলে জিতেছিল ব্রোঞ্জ পদক। ওটা ছিল আসলে ২০১৬–র প্রতিযোগিতা। ৮ মাসের ব্যবধানে আবার জাতীয় প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতা, উদয়পুরে নভেম্বরে। বালির সাড়ে ১১ বছরের সায়ন দলুই ৮ মাস আগের ব্রোঞ্জটাকে সোনায় পরিণত করতে চায় এই মানিক রতন। পাশাপাশি এবার আর একটা নয়, চায় একাধিক পদক। উদয়পুরে সায়ন অংশ নেবে ৩টি ইভেন্টে। ১০০ মিটার ফ্রি–স্টাইল, ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোক ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্টোকে।

বালির হাজরাপাড়ার গৌতম ও সারথি দলুইয়ের পুত্র সায়ন ২০০৬–এর ১ মে জন্মেই ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। ডান হাতে কনুইয়ের নিচের অংশ নেই। ওখানেই জোড়া দুটো আঙুল। প্রাথমিকভাবে যা হওয়ার তা–ই হয়েছিল, মা–বাবা একটু ভেঙেই পড়েছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখে চলেছেন গৌতম–সারথি। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই ৬ বছর বয়সে ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাড়ির কাছের বালি সুইমিং ক্লাবে। ওখানে কোচ সুব্রত মুখার্জির কাছে সাঁতার শেখা শুরু সায়নের। শুরুতেই সাঁতারে ছেলের আগ্রহ দেখে মা–বাবাও আর অন্য কিছু ভাবেননি। ছেলেকে সাঁতারেই উৎসাহ দিতে থাকেন। আস্তে আস্তে সাফল্যও পেতে থাকে সায়ন। রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে এ বছর জয়পুরেই প্রথম জাতীয় প্যারা সুইমিংয়ে অংশ নেওয়া। ওখানকার ওই ব্রোঞ্জ পদকটা সাঁতারের প্রতি ওর আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বেলুড় বয়েজ হাই স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্র সায়ন বলছিল, ‘‌‌লেখাপড়া আর সাঁতারের বাইরে আমার আর কিছু ভাল লাগে না।’‌

বালি সুইমিং ক্লাবের সহ–সচিব এখন প্রাক্তন সাঁতারু সুরজিৎ ঘোষ। তিনি বলছিলেন, ‘‌আমাদের ওখানে প্যারা ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখানোর আলাদা ব্যবস্থা আছে। ওদের সাঁতার শেখানোর কাজটা করে সুব্রত মুখার্জি। ওর কাছেই সায়ন শুরু করেছিল। ভাল করার পর নর্মাল ছেলেদের সঙ্গে বাদল ব্যানার্জির কাছে কোচিং নিচ্ছে।’‌

ভারতে প্যারা সুইমিংয়ে বড় নাম প্রশান্ত কর্মকার। সেই প্রশান্তই আদর্শ সায়নের। জয়পুরে জাতীয় প্যারা সাঁতারে অংশ নিতে গিয়ে কাছ থেকে দেখেছে প্রশান্তকে। বড় হয়ে প্রশান্তের সাফল্যকে ছুঁতে চায় সায়ন। বলছিল, ‘‌ওঁর মতো আমিও আন্তর্জাতিক সাঁতারে অংশ নিতে চাই। যেতে চাই প্যারালিম্পিকে। জিততে চাই দেশের হয়ে মেডেল।’‌‌‌‌‌