যশোরের রাজগঞ্জে কৃষকের ঘরে ধান উঠার সাথে সাথে শুরু হয়েছে “হালখাতা” উৎসব

কৃষকের ঘরে ধান উঠেছে। তাই, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোর দোকানে দোকানে শুরু হয়েছে হালখাতা উৎসব। এক সময় ছিলো বাংলা সনের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা বৈশাখে দোকানীরা তাদের দোকানের পুরাতন সকল হিসাব হাল করার জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হালখাতা উৎসব করতো। সে সময়ের সারাবছর ব্যবসা বাণিজ্যের বকেয়া আদায় করার উৎস বা অনুষ্ঠান হল হালখাতা। এই হালখাতা উৎসব বছরে একবার করা হতো। আর ব্যবসা চলতো সারা বছর।
জানা গেছে- হিসাবের খাতা হাল নাগাদ করা থেকে “হালখাতা”-র জন্ম। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছোট বড় মাঝারি যেকোনো দোকানেই এটি পালন করা হয়ে থাকে।

হালখাতা উৎসবের দিন সকালে সনাতন ধর্মাবলম্বী দোকানী ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিদাতা গণেশ ও বিত্তের দেবী ল²ীর পূজা করে থাকেন। সাথে সাথে তাদের সারাবছর যেনো ব্যবসা ভালো যায়, এই কামনায় প্রার্থনাও করে থাকেন। তাদের ধর্মীয় সকল নিয়ম মেনেই খাতায় নতুন বছরের হিসেব নিকেশ আরম্ভ করেন। এই দিন ক্রেতাদের আনন্দ দেয়ার জন্য মিষ্টি, দই, ঠান্ডা পানীয়, মাংস ভাতসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী একাধারে ২ অথবা ৩ দিন পর্যন্তও চলমান রাখে হালখাতা উৎসব। হালখাতার আগে থেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা দোকানে এসে, নতুন জামা-কাপড় পরে বসেন ব্যসায়ীরা। হালখাতার ক্যাশে রাখা হয় শিক্ষিত নতুন লোক। এই হালখাতাকে ঘিরে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিষ্টির দোকানগুলো। এর আগে ব্যস্ততা দেখা যায় হালখাতার কার্ড তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রেস প্রতিষ্ঠানে।

রাজগঞ্জ অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়- বড় বাজার রাজগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী ছোট বড় সকল বাজার যথাক্রমে- রোহিতা, খেদাপাড়া, মদনপুর, এনায়েতপুর, ষোলখাদা, ঝাঁপা, চালুয়াহাটি, নেংগুড়াহাট, শয়লাহাট, কাঁঠালতলা, পারখাজুরা, চাকলা, খোরদো, মশ্বিনগর, চাঁপাতলা বাজারসহ আশেপাশের বিভিন্ন মুদিদোকান, কসমেটিক্স, সার্ভিসিং সেন্টার, জুয়েলারী, ওয়েল্ডিং-এর দোকান, সার-কীটনাশকের দোকান, ওষুধের দোকান, বেকারী, ভ্যারাইটিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, তেলের দোকান, ফার্নিচারের দোকান, কাঁচা তরিতরকারির দোকান, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এ হালখাতা শুরু হয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানে হালখাতাকে কেন্দ্র করে নানান রঙ-বেরঙের সাজ-সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া রাতে হরেক রঙ-এর মিউজিক লাইটিং করা হয়েছে। এমনকি মাইকে গান, গজল, ওয়াজ, নাটক ইত্যাদি বাজিয়ে মুখরিত করে রেখেছে। প্রতিটি এলাকা ও বাজারগুলোতে পৌঁছালে মনে হয় যেনো চারিদিকে উৎসব চলছে।

বছরে দুইবার আমন ও বোরো ধান উঠলেই শুরু হয় এই হালখাতা উৎসব। একারনে কৃষকরা ধান বিক্রি করে দোকানীদের পাওনা পরিশোধ করে হালখাতার মাধ্যমে। সাধারণতো এসময় ধানের দামও কিছুটা কমে যায়। এতে কৃষকদের মাঝে চাঁপা ক্ষোপও থাকে।

এদিকে এই হালখাতাকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনাও কাজ করে। বিক্রেতারা তাদের পাওনা আদায় করতে নানা ধরনের আয়োজন করে। সাথে সাথে ক্রেতাদের খুশি করতে মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
এই উৎসবকে ঘিরে রাজগঞ্জ অঞ্চলের চারিদিকে যেনো উৎসব উৎসব পরিস্থিতি বিরাজ করছে।