অর্থাভাবে সংসারের দায়িত্ব এখন শিশু শিক্ষার্থী রবিউলের কাঁধে

বয়স মাত্র নয় বছর, লেখাপড়া করছেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে। আর এতোটুকু বয়সেই কাধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের গুরু দায়ীত্ব। দুচোখে স্বপ্ন আছে অনেক। কিন্তু প্রতিবন্ধী পিতার ঘরে জন্মনিয়ে লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও সংসারের টানপোড়নে তা অনেকটাই অপুরনীয়। বিদ্যালয় খোলা থাকলে পাঠদানে অংশগ্রহন শেষে বাকিটা সময় ভাজা ছোলা বাদাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন জিবীকার সন্ধ্যানে। তবুও উচ্চ শিক্ষালাভের আশার আলো জ্বলছে তার ছোট্র দেহের কোমল হৃদয়ে।

উপজেলার মহিপুর থানার সদর ইউপির পুরান মহিপুর গ্রামের বাসীন্দা শহিদ শিকদার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাত এবং পা দুটোতেই শক্তি কম পান বলে প্রায় অচলাবস্থা তার। তবুও অর্ধাচল পায়ে ভর দিয়ে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করা উপার্জনেই দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে চলছিলো তার জীবন সংসার। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে প্রায় অচলাবস্থায় পড়ে সংসারে দেখা দিয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। তাই এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে সংসারের দায়ীত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন সদা হাসউজ্জল মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিশু শিক্ষার্থী মো.রবিউল ইসলাম। এর আগে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি বাবার বাদাম বিক্রির কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও এখন সম্পূর্ণ আত্মনির্ভশীল হয়ে উঠেছেন এই খুদে বাদাম বিক্রেতা।

মহিপুর থেকে কুয়াকাটা,কলাপাড়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রির পাশাপাশি ছোলাবুট, মটর ভাজাও বিক্রি করছেন তিনি। যে বয়সে খেলাধুলা, হই হুল্লোরে মেতে ওঠার কথা, সেই বয়সে পরিবারের আহার যোগাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাইলের পর মাইল। মাঝে মাঝে ক্রেতাদের সাথে খুনশুটিতেও মেতে ওঠে রবিউল। হাসি মাখা কথার ফুলঝুড়িতে ঝড়ে পরে স্বরল স্বীকারোক্তী।

কথা হলে রবিউল জানায়, স্যার মোরে কেউ যদি পড়ালেহা করাইতে হেলে আর বাদাম বেঁচতে আইতাম না। পড়া লেহা কইরা বড়ো অফিসার হইতাম। কিন্তু টাকা পামু কই? আব্বায় প্রতিবন্ধী। আমার ছোডো একটা বোইন আছে, মা আছে। করোনার মধ্যে ঘর দিয়া বাইরে যাওয়া যায়না। বাদাম না বেঁচলে হ্যারা খাইবে কি?

রবিউলের ভাষ্যমতে প্রতিদিন ১০ টাকা করে প্যাকেটে বাদাম, বুট প্রভৃতি বিক্রি করে ২’শ টাকার মতো উপার্জন হয় তার। এসব টাকা বাবার কাছেই জমা দেয় সে। আর এ বাদাম বিক্রর রসদ দিয়েই মেটে নিত্য প্রয়োজনীয় সংসারের খাদ্য চাহিদা। রবিউলের বাবা শহিদ শিকদার জানান, আমি একজন প্রতিবন্ধী, গরীব মানুষ আমরা। তাই ছেলেকে ঠিকমতো পড়ালেখা করাইতে পারিনা। ওর লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। কিন্তু বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। বাদাম বিক্রির পাশাপাশি যেন পড়ালেখাও করতে পারে রবিউল এজন্য সকলের কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশিদা বেগম বলেন, বর্তমানে করোনায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। রবিউল অনেক গরীব ঘরের সন্তান বলে শুনেছি। ওকে উপ উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। তবে পরবর্তীতে স্কুলে কোনো সুযোগ সুবিধা হলে অবশ্যই রবিউলকে আগে দেয়া হবে।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান জানান, তার বাবা শহিদ শিকদার ইতোমধ্যেই সমাজ সেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। পরবর্তীতে হুইল চেয়ার সহ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ আসলে তার জন্য ব্যাবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আগামী অর্থবছরে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি বরাদ্দ আসলে রবিউলের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হবে।