কিশোরী পাগলীকে বেঁধে রেখে পলিথিনের ছাউনিতে আবেজানের জীবন সংসার

ঘরে শয্যাশায়ী শাসকষ্টে আক্রান্ত ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মা। চার কন্যার মধ্যে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রিয়ামনি মানসিক ভারসম্যহীন। নেই মাথা গোজার ঠাইটুকুও। বেরিবাঁধের বাহিরে খড়কুটা দিয়ে যে আবাসস্থল গড়েছিলেন তাও হারিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই পলিথিনের ছাউনির নিচে মানসিক ভারসম্যহীন কন্যাকে বেঁধে রেখে বেরিয়ে পড়েন গৃহপরিচারিকার কাজে। আর মাঝে মধ্যে আহার যোগাতে ব্যর্থ হলে সেদিন অনাহারে থেকেই কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েন সন্তানেরা।

তাই বেঁচে থাকার ক্ষীন আশাটুকু নিয়ে ঠিক এভাবেই চলছে হতভাগী যুবতীর জীবন সংসার।

মোসাঃ আবেজান বিবি(৩৫) নিতান্তই গরীব জেলে পরিবারের সন্তান হওয়ায় একাধিক কন্যাসহ ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়েছেন স্বামী। আর বাবা মজিদ মিয়া জেলে পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় রোগাক্রান্ত হয়ে পৃথীবী ছেড়েছেন প্রায় দুই যুগ আগে।

স্বামী পরিত্যক্তা এই যুবতীর বসবাস উপজেলার নীলগঞ্জ ইউপির রহমতপুর গ্রামে সরকারী জমিতে তোলা মায়ের ঘরের বারান্দায়। গত কয়েক বছর ধরে কোথাও মাথা গোজার ঠাই না পেয়ে চার কন্যাকে নিয়ে ওই বারান্দায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গড়ে তুলেছেন আবাসস্থল। সেখানে থেকেই অসুস্থ মায়ের দেখভাল করাসহ কন্যাদের আহার যোগাতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তবে গৃহপরিচারিকার কাজ করে উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ হলে সেদিন অনাহারে থেকেই কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সব চেয়ে ছোট কন্যা ৩ বছর বয়সী জান্নাতি। আর মানুষের বাড়িতে ঘামঝড়ানো কষ্টার্জিত যৎসামান্য অর্থও খরচ করতে হয় মায়ের চিকিৎসা ব্যয়ে। তবুও পরম মমতায় পরিবারকে আগলে রাখার অদম্য চেষ্টায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আবেজান বিবি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে এই অসহায় পরিবারটির করুন চিত্র। মা আবেজান বিবি পরিবারের জীবীকার তাগিদে বেড়িয়েছেন অন্যের বাড়ির কাজে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও মেয়েদের খাবারের কোন হদিস নেই। তাই কৌটা কুড়িয়ে কাঁচা চাল চিবিয়ে খাচ্ছে মানসিক অসুস্থ কন্যা রিয়ামনি। আর পলিথিনে মোড়ানো ছাউনি ঘরের ছোট্র রানী জান্নাতি মায়াভরা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে মায়ের অপেক্ষায়।

কিছুসময় অপেক্ষার পর আঁচলে পোটলা গুজে গৃহে ছুটে আসেন আবেজান। জানতে চাইলে অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরে কান্না জুড়ে দেন তিনি। জানালেন পিতা হারা স্বামী হারা সংসারে অসুস্থ মা এবং পাগলী কন্যাসহ চার মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা। মা আমেনা বেগম শয্যাশায়ী প্রায় ২০ বছর ধরে। সংসারের অভাব আর একাধিক কন্যা জন্ম নেয়ায় স্বামীও ফেলে গেছেন। আর বাবার মৃত্যুর আগে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে একমাত্র ভাইয়েরও সলিল সমাধি হয়েছে।

তাই পরিবারে উপার্জানক্ষম কেউ নেই। যে ঘরটুকু ছিল রাস্তার পাশে তাও দুর্যোগে হারিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের সরকারী ঘরের বারান্দায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাউনিতে বেড়া না থাকায় পাগলী মেয়েসহ কিশোরী মেয়েদের নিয়ে দারুন দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে সরকারী ভাবে কোন ঘর কিংবা সহযোগীতা না পাওয়ায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ তিনি।

এছাড়া সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না বলেও কপালে চিন্তার ভাজ। মা আমেনার দাবী, তার মৃত্যুর আগে মেয়ে আবেজান আর নাতনীদের জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা যেন করেন উপরওয়ালা।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, আবেজান বিবির কথা কেউ আমাকে অবহিত করেনি। তাকে ঘর দেয়ার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া যতটুকু সম্ভব সাহায্য সগযোগীতা করার চেষ্টা করবো।