খাগড়াছড়িতে লকডাউনে মানবেতর জীবন পরিবহন শ্রমিকদের

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলায় লকডাউনে পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছেন। সারাদেশে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার বন্ধ রয়েছে। এই মুহুর্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা এক প্রকার অভাবে না খেয়ে আছেন।

বেতন নেই, আয়ের বিকল্প কোনো পথ নেই, সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা নেই, ত্রাণও নেই- তা হলে কীভাবে চলবে পরিবহন শ্রমিকরা? সবচেয়ে বড় হলো ভাতের কষ্ট-সেই কষ্টে আক্রান্ত তারা এখন। লকডাউনের কঠিন দিনে দেখার কেউ নেই তাদের। তারা কি তাহলে না খেয়ে মরবেন?

এসব কথা বললেন বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারের কর্মচারী মো.আমিনুল ইসলাম।
আগে দৈনিক ৪০০টাকা বেতনে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু এখন বাস, টিকিট কাউন্টার সব কিছু বন্ধ। বেতনও বন্ধ।

আমিনুলের ভাষায়, ‘হাতে টাকা-পয়সা নেই। নিজের ও পরিবার-পরিজনের খরচ কোথায় পাব? এরকম চললে আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে।’

সরেজমিন দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালসহ সব টার্মিনালেই সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। লকডাউনে দূরপাল্লার এসব বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপারদের খোঁজ কেউই নেন না। লকডাউনের আগে তারা কতগুলো ট্রিপ চালাতে পেরেছেন, কত টাকা বেতন পেয়েছেন-এসব হিসাব করলে দেখা যাবে, খেয়ে-বেঁচে থাকার মতো টাকা-পয়সাও তাদের হাতে নেই।

এবারের লকডাউনের আগে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত আট দিন রাস্তায় প্রচন্ড জ্যামের কারণে বাসগুলোর কোনোটি দু-তিনটি, কোনোটি সর্বোচ্চ চারটি, অনেকে মাত্র একটি ট্রিপ চলতে পেরেছে। এসব ট্রিপ থেকে শ্রমিকদের কেউ এক হাজার, কেউ তেরশ-চৌদ্দশ, কেউ মাত্র পাঁচশ টাকা পেয়েছেন।

দূরপাল্লার গাড়ির হেলপার মো. রফিক জানান, লকডাউনের আগে তিনি তিন ট্রিপ গাড়ি চালিয়ে দেড় হাজার টাকা পেয়েছেন। এ থেকে পরিবারকে কোনো টাকা দিতে পারেননি। কারণ আগে নিজেকে চলতে হবে। কিন্তু সেই টাকাও শেষ। গাড়ি পাহারা দেওয়ায় গাড়ির মালিক তাকে প্রতিদিন একশ টাকা খোরাকি হিসেবে দেন। এই টাকায় তার দিন-রাতের খাওয়া হয় না। কারণ এক বাটি ভাত-তরকারিও কিনে খেতে লাগে ৬০-৭০টাকা।

পরিবহনের হেলপার মেহেদি হাসান বলেন, এক ট্রিপ গাড়ি চালিয়ে পেয়েছিলেন ছয়শ টাকা। প্রচন্ড অর্থ সংকটে দিন কাটছে তার।

শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম জীবন জানান, লকডাউনের আগে দুই ট্রিপ গাড়ি চালিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন এক হাজার তিনশ টাকা, যা শেষ হয়ে গেছে।
এখন কীভাবে চলবেন-এই চিন্তায় অন্ধকার দেখছেন তিনি।

বুধবার (২৮ জুলাই) সরেজমিন বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দুর্দিন চলছে দূরপাল্লার বাস শ্রমিকদের।

বাসের হেলপার রাকিব হোসেন এ সময় বলেন, ‘আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, সেটা একমাত্র সৃষ্টি কর্তা জানে। আর কেউ জানে না।’