গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ফেয়ারপ্রাইজের কার্ডধারীদের হয়রানি বন্ধের দাবী ভুক্তভোগিদের

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ফেয়ারপ্রাইজের ১৫ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড ডিজিটাল ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসতে উপজেলা প্রশাসন নির্দেশ দেয় ইউনিয়ন পরিষদকে।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায় জনপ্রতিনিধিরা। অনলাইনের নিদিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও শালমারা ইউনিয়নে এখনও শেষ হয়নি অনলাইনের কাজ। ভুক্তভোগি কার্ডধারীরা ইউ’পি/চেয়ারম্যান মেম্বরদের কাছে অনলাইনের জন্য কার্ড জমা দিলেও এখনও নতুন কার্ড হাতে না পাওয়ায় চালের ডিলারগন উপকারভোগিদের মাঝে চাল বিতরণ করতে পারছে না।

রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেনের কাছে শালমারা ইউনিয়নের ৪৯ জন কার্ডধারী একযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এম এ মতিন মোল্লা।

শালমারা ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের মৃত, নিদানু শেখের ছেলে মোঃ আব্দুস ছালাম শেখ (৬০) নিজেকে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ক্ষুদ্র কর্মি দাবী করে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, সে হতদরিদ্র হওয়ায় বিগত ইউপি চেয়ারম্যান তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ১৫ টাকা কেজি দরের ফেয়ারপ্রাইজের একটি কার্ড দেন। সে নিয়মিত ভাবে ওই কার্ড নিয়ে ডিলারের কাছ থেকে চাল উত্তোলন করে পরিবার পরিজন নিয়ে খেতেন। এরই মধ্যে সে লোকজনের কাছ থেকে শুনতে পায়, প্রধানমন্ত্রী এইসব কার্ড ডিজিটাল ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসছে। কার্ডটি ডাটাবেজ কি ভাবে করতে হয়, তা জানার জন্য ওয়ার্ড মেম্বর দুদু মিয়ার কাছে শুনতে গেলে, তিনি বলেন, ইউ’পি মেম্বর ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিয়ে উদ্যোক্তার কাছে জমা দিলে তোমার কার্ড অনলাইন হবে। এতে ইউ’পি মেম্বর দুদু মিয়া অতিরিক্ত টাকা দাবী করেন এবং সংরক্ষিত মহিলা ইউ’পি সদস্য জিনজিরার ছেলে জনি মিয়া, চেয়ারম্যানের বাড়ীতে অনলাইন করতে ৫০০ শত টাকা করে সবার কাছ থেকে উত্তোলন করে, তবে কার্ডধারীদের তোপের মুখে পড়ে সেই টাকা ফেরত দেয়।

তিনি অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, অনলাইন করার জন্য নিজেসহ হতদরিদ্র অনেক পরিবার চেয়ারম্যানের বাড়ীতে ঘুড়তে ঘুড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। জমাকৃত কার্ড ফেরত চাইতে গেলে ওয়ার্ড মেম্বর দুদু মিয়া তার ছেলে ও পরিবারকে মারপিট করে উল্টো থানায় তার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তাই বাদ পড়া সকল হতদরিদ্র ফেয়ারপ্রাইজের কার্ডধারীদের ডাটাবেজের আওতায় অনলাইনের কাজ শেষ করতে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের জরুরি আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহবায়ক এম এ মতিন মোল্লা বলেন, যে সব জনপ্রতিনিধি হতদরিদ্র মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত আহবান জানান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বাবু স্বপন দে বলেন, ফেয়ারপ্রাইজের কার্ডধারীদের অনলাইনে আওতায় নিয়ে আসার সরকারী সময়সীমা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এখনও অনেক কার্ডধারী অনলাইন করতে পারেননি। চেয়ারম্যান/মেম্বরদের স্বাক্ষর ছাড়া ইউনিয়নের উদ্যোক্তারা এসব কার্ড অনলাইনে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কার্ডধারীকে অনলাইন করতে হলে কোন চেয়ারম্যান/মেম্বরের স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই। ফেয়ারপ্রাইজের নীতিমালা সর্ম্পকে তিনি বলেন, যদি কেউ ভিজিডি কার্ডধারী থাকেন, এ ক্ষেত্রে তিনি ফেয়ারপ্রাইজের তালিকা থেকে বাদ যাবেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।