নরসিংদীতে সরবরাহ বেড়েছে শীতের সবজির, কমেছে দাম

নরসিংদীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ। ফলে কমে এসেছে সবজির দাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সবজির দাম আরও কমে আসতে পারে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এ বছরের মাঝামাঝি ও খরিপ মৌসুমের শুরতে কয়েক দফা অতি বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় সবজির দাম ছিল আকাশচুম্বি। তবে বর্তমানে বাজারে বিপুল পরিমাণ সবজি সরবরাহ হওয়ায় দাম কমেছে।

নরসিংদীর বারৈচা, যোশর, বেলাব, শিবপুর, রাধাগঞ্জ, হাতিরদিয়া, নারায়ণপুর ইত্যাদি পাইকারি সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। কিছু দিন আগেও যার দাম ছিল ৮০-১২০ টাকা। তেমনি দাম কমেছে অন্যান্য সবজিরও। ফুলকপি, শশা, লাউ, টমেটো, গাজর, সিম, বরবটি, মূলা, বেগুন ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কেজি প্রতি কমেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এসব সবজির উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

হাতিরদিয়া বাজারের কৃষক আবুল হোসাইন বলেন, বছরের শুরতে একাধিকবার বীজতলা নষ্ট হয়েছে। যার ফলে শীতের সবজি বাজারে আসতে দেরি হওয়ায় দাম বেশি ছিল। এখন আমরা ভালো ফলন পাচ্ছি এবং দামও কম।

এখলাস মিয়া নামে বারৈচা বাজারের আরেক কৃষক জানান, বর্তমান আবহাওয়া অনুকূল। যার ফলে প্রায় সব ধরনের সবজির ফলন ভালো হচ্ছে। বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় আমরা পাইকারি মূল্যে বিপুল পারিমাণে সবজি বিক্রি করতে পারছি।

অন্যদিকে বাজারদর নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ। নরসিংদীর বটতলা বাজারে সবজি কিনতে আসা রাশেদ মিয়া নামে এক গার্মেন্টস কর্মী জানান, মাস খানেক আগেও সবজির দাম ছিলো প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে বাজারে সবজির যোগান বেশি থাকায় দাম কমেছে।

রহুল আমিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমরা যারা ছোট-খাট চাকরি করি তাদের পক্ষে কিছুদিন আগেও সবজির বাজার ছিল আতঙ্কের জায়গা। দেরিতে হলেও বাজারে শীতকালীন সবজি আসায় এখন আমরা মোটামুটি মানিয়ে নিতে পারছি।
এদিকে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৭০ ভাগ সবজির চাহিদা পূরণ করে থাকে নরসিংদীর ৯টি পাইকারি বাজার। তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পেরে খুশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পাইকাররা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি এমন থাকলে মৌসুমের শুরর ধাক্কা তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকার হামিদ পাটোয়ারী বলেন, বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হওয়ায় দাম দিয়ে কিনতে হয়েছিলো সবজি। বর্তমানে বাজারে বিপুল পরিমাণে সবজির সরবরাহ থাকায় দাম কমেছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সবজি কিনতে আসা হারিসুল হক নামে আরেক পাইকার বলেন , সবজি কম দামে কিনতে পারলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারব। গত মাসে সবজির যোগান না থাকায় দাম বেশি ছিল। বর্তমানে নতুন সবজি আসায় দাম কমেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে, এ বছর জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে সবজি সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। দাম কমলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, সবজির দাম কমলেও কৃষকের তেমন ক্ষতি হবে না।

যদিও তাদের বীজতলা নষ্ট হয়েছে কিন্তু সর্বশেষ এক মাসের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে। তাছাড়া সারাদেশে এখানকার সবজির চাহিদাও রয়েছে। প্রতিনিয়তই পাইকাররা এখানে এসে সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।