থানায় স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার

নাঙ্গলকোটে পিতাকে হত্যার দায়ে ৩ দিনের রিমান্ডে ছেলে

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চাঞ্চল্যকর এনামুল হক (৬২) ওরপে এনাম দরবেশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী মাফিয়া খাতুন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে নাঙ্গলকোট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সন্দেহজনক আসামী হিসেবে এনামুল হকের বড় ছেলে নুর মোহাম্মদ সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সুমন থানা পুলিশের নিকট পিতার সাথে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ পুকুরের কাদা মাটিতে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সুমন কুমিল্লার আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে গিয়ে পিতাকে হত্যার কথা অস্বীকার করেছেন। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) কামরুল ইসলাম হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে সুমনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) কামরুল ইসলাম বলেন, থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানান, প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে তার পিতা এনামুল হক ৮ লাখ টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে তার এক ভাই শাহজাহানকে প্রবাসে প্রেরণ করেন। পরে অন্য ছোট ভাই শাহপরানকে প্রবাসে প্রেরণের জন্য প্রস্তুতি নেন। তার পিতা সম্পত্তি বিক্রয়ের ৮লাখ টাকার মধ্যে তাকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা প্রদান করে। সে তার হিস্যা অনুযায়ী আরো বেশি টাকা পায়। সে তার ৩ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে থাকতে হচ্ছে বলে তার পিতাকে জানায়। পরে সুমন বিভিন্ন সময়ে তার পিতাকে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু পিতা সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি হননি। সে থেকে তার পিতার প্রতি তার ক্ষোভ জন্ম নেয়। সুমন মনে করে, তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় সে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে না। তাই পিতাকে হত্যা করলে সে সম্পত্তির মালিক হবে। এজন্য সে তার পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পিতা এনামুল হক স্থানীয় জোড্ডা বাজারে যায়। সন্ধ্যা থেকে সুমন সুযোগ খুঁজতে থাকে কখন তার পিতা বাড়ি আসবে। এর মধ্যে সে বাড়ির উঠানে পায়চারি করতে থাকে। পরে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে তার পিতা বাড়ির পাশ্ববর্তী পুকুর পাড় হয়ে বাড়ি আসার সময় পুকুর পাড়ে দাঁড়ায়। এসময় সুমন পিছন দিক থেকে দেশীয় অস্ত্র বটি দিয়ে তার পিতার গাড়ে, পিঠে এবং গালে একাধিকবার কুপিয়ে তার পিতা এনামুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সে এনামুল হকের লাশ পুকুরে কাদা মাটিতে নিয়ে কোদাল দিয়ে লাশ কাদা মাটিতে পুঁতে রাখেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ও বুধবার তার মা মাফিয়া খাতুন পুকুরের দিকে যেতে চাইলে সুমন মায়ের পিছনে-পিছনে যায়। এসময় মা মাফিয়া খাতুন ও সুমনের স্ত্রী সুরমা বেগমের নিকট সুমনের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়।

বৃহষ্পতিবার ( ২২ এপ্রিল) সকালে সুমনের মা পুকুর থেকে কাদা মাটি আনতে যায়। এসময় কাদা মাটি খুুঁড়তে গিয়ে শক্ত কিছুর নাগাল পেয়ে ছোট ছেলে শাহপরানকে ডেকে দেখতে বলেন। শাহপরান কাদা মাটিতে খুঁড়ে কাদা মাটিতে পুঁতে রাখা তার পিতার লাশের সন্ধান পায়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এনামুল হকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পুলিশ এসময় পিতার হত্যাকারী জড়িত সন্দেহে এনামুল হকের তিন ছেলে নুর মোহাম্মদ সুমন (৩২), নুর আলম সুজন (৩০) ও শাহপরানকে (২৪) থানা হেফাজতে নেন। পুলিশ ঘরের ভিতর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দেশীয় অস্ত্র দা, বটি ও কোদাল উদ্ধার করে। এসময় সহকারি পুলিশ সুপার (চৌদ্দগ্রাম সার্কেল) সাইফুল ইসলাম, নাঙ্গলকোট থানার ওসি, পি বি আই, ও সি আই ডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যাকান্ডের আলামত সংগ্রহ করেন। এনামুল হকের লাশের ময়নাতদন্তে শেষে গত শুক্রবার তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাতে এনামুল হকের স্ত্রী মাফিয়া খাতুন স্বামীকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) কামরুল ইসলাম এনামুল হকের তিন ছেলের মধ্যে পিতার হত্যাকারী সন্দেহজনক আসামী হিসেবে বড় ছেলে নুর মোহাম্মদ সুমনকে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় সুমন পিতাকে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করে।

গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) কামরুল ইসলাম কুমিল্লার আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইফরানুল হক চৌধুরীর আদালতে নুর মোহাম্মদ সুমনকে সোপর্দ করেন। কিন্তু সুমন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পিতার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও বিজ্ঞ আদালতে বিচারকের নিকট পিতার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকা নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে অস্বীকার করে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের নিকট সুমনের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন। বিজ্ঞ বিচারক সুমনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে, এনামুল হকের লাশ উদ্ধারের পর তার বড় ছেলে নুর মোহাম্মদ সুমন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিয়াজির নিকট পিতাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাকে বাঁচান। আমি জেলে গিয়ে একদিনও থাকতে পারবো না। যে কোন উপায়ে আমাকে বাঁচান। সে প্রয়োজনে ৫ লাখ টাকা খরচ করতে রাজি হয়।