পৃষ্ঠপোষকতায় কুমিল্লার খাদির ঐতিহ্য ফিরতে পারে

একসময় তাঁতে তৈরি কুমিল্লার খাদির খুব নামডাক ছিল। জনপ্রিয় ছিল দেশের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে। মানুষ কুমিল্লাকে চিনত খাদির শহর হিসাবে। কিন্তু এখন অনেক তাঁতি এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। তাঁতে তৈরি খাদি বাজারের পরিধি দিনদিন ছোট হয়ে আসছে।

খাদি নামে আছে; কিন্তু নেই আসল খাদি। এখন বেশির ভাগ খাদিই মেশিনে তৈরি হচ্ছে। এতে ঐতিহ্য হারাচ্ছে কুমিল্লার তাঁতের খাদি। কালের সাক্ষী হিসাবে বর্তমানে টিকে রয়েছে গুটিকয়েক তাঁত। সেগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে।

কুমিল্লার চান্দিনা, মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে তাঁতের খাদি কাপড় থেকে তৈরি হতো পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বিছানার চাদর। এখন আর সে চিত্র দেখা যায় না। এখন আর আগের মতো তাঁত চোখে পড়ে না। দেবিদ্বারের বড় কামতা গ্রামের দুই ভাই চিন্তাহরণ ও রণজিৎ দেবনাথ এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

তারা জানান, এখন কুমিল্লার বাজারে তাঁতের চেয়ে মেশিনের তৈরি খাদিই বেশি দেখা যায়। আগের মতো তাঁতে তৈরি খাদির যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা নেই। তাঁতও নেই আগের মতো। সারা বছর নারীরা চরকায় সুতা কাটতেন। কিন্তু তাঁত কমে যাওয়ায় এখন তাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাঁতের খাদির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সরকার নজর না দিলে একসময় এ খাদি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা তাঁতের খাদিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে জানাব। এছাড়া কুমিল্লার খাদিকে ভৌগোলিক স্বত্ব (জিআই) স্বীকৃতির জন্য আবেদনের চেষ্টা করছি।

এদিকে কুমিল্লায় এবারের ঈদ কেনাকাটায় অন্য পোশাকের পাশাপাশি খাদির পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, ফতুয়া, শাড়ি ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। তবে এ খাদি কাপড় মেশিনের তৈরি হলেও মান ভালো। অন্য কাপড়ের দাম বাড়লেও খাদি এখনো ক্রেতার নাগালের ভেতরে আছে।

সূত্রমতে, কুমিল্লায় এলে ঐতিহ্য খাদির পোশাক না কিনে কেউ খালি হাতে যান না। এখনো কুমিল্লা শহরে চারশর উপরে খাদির দোকান আছে। এসব দোকান রয়েছে নগরীর কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা ও রাজগঞ্জ বাজারে। দেড় হাজারের কাছাকাছি পরিবার এ পেশায় জড়িত।