পটুয়াখালি ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ বিত্তবানের নামে খাস জমির দলিল সম্পাদন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ জন বিত্তবান ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর খাস জমির দলিল সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। আর দলিল সম্পাদনে ইউএনওর সাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে দাবী উপজেলা প্রশাসনের।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, দুর্নীতির মূল হোতা কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির। তবে সাবরেজিস্ট্রী অফিস কর্মকর্তাদের বিচক্ষনতা এড়িয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কিভাবে একাধিক দলিলসহ সর্বোচ্চ তিন একর জমির দলিল সম্পাদিত হয়েছে এনিয়ে জনমনে রয়েছে নানান প্রশ্ন।

এদিকে নামজারী করতে গিয়ে বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার কলাপাড়া সহকারী কমিশনার ভূমি আবু বক্কর সিদ্দিকীর দৃষ্টিগোচর হলে এমন পুকুর চুরির তথ্য বেরিয়ে আসে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনা সত্যতা প্রকাশের পর এর প্রেক্ষিতে রোববার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে সার্ভেয়ার হুমায়ুন’র বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছেন ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমিসহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে তিনটি স্মারকে ১৯৫ টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়ত রেজিস্ট্রী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার মোঃ হুমায়ুন কবিরকে তার সাক্ষর সত্যায়ন করে খেপুপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির তিন দফায় আরও ৪২টি বিত্তবান শ্রেণির কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে তাঁদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০ টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩ টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়াত দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় সার্ভেয়ার হুমায়ুন। এই ৪২ টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২ টি নামে এই পরিমান খাস জমি মুজিবশতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটাছেড়া করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, তার সই স্ক্যান করে এসব কবুলিয়ত ফরমে ব্যবহার করা হয়েছে। যা তালিকার নিচে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে,এমনকি অফিসেও নেই তিনি। জানা যায়,মুজিববর্ষের সকল কবুলিয়াত রেজিস্ট্রিতে দুই শতক খাস জমি দেয়ার কথা লেখা থাকলেও একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির। বর্তমানে এই ৭২ একর খাস জমির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এদিকে সার্ভেয়ারের এমন জালিয়াতির ঘটনায় আর কে কে জড়িত তা এখন অফিস পাড়ায় মানুষের মুখে মুখে সর্বত্তই অলোচনা হচ্ছে। সাব রেজিস্টার রেহেনা পারভিন সাংবাদিকদের জানান,যেহেতু ভূমিহীন গৃহহীনদের দলিল ছিল, এবং ইউএনওর সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছে। তাই সরল বিশ্বাসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এই অবস্থা। তবে ওই ৪২টি কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা আবু হাসানাত মোহাম্মদ শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যাতা পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।