পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ইউপি নির্বাচনের জের ধরে হামলা, আহত যুবলীগ নেতা

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বারের সমর্থকরা পরাজিত মেম্বার সমর্থকদের উপর হামলা করেছে।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত মেম্বার হারুন অর রশিদ ও তার সমর্থক, আত্মীয়স্বজন ও কতিপয় দূর্বৃত্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে পরাজিত প্রার্থী আব্দুর রশিদের সমর্থকদের উপর বেপরোয়া হামলা চালায়।

এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়। পাড়বাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হাসিনুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক কোরবান উল্লাহকে মেরে গুরুতর জখম করে। এসময় কোরবান উল্লাহকে অচেতন অবস্থায় ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এছাড়াও ওই দিন পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হাসিনুর রহমানের উপর দুপুরে ও সন্ধার দুই দফায় পর্যায়ক্রমে হামলা করে পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত মেম্বর হারুন অর রশিদ ও তার সমর্থক, আত্মীয়—স্বজন ও কতিপয় দূর্বৃত্তরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত কোরবান উল্লাহকে জরুরি ভিত্তিতে মাথার সিটি স্ক্যান, এক্সরে ও আনুষঙ্গীগ পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে বলা হয়েছে। প্রচন্ড আহত কোরবান উল্লাহর দুই পা ও পেটে জখমজনিত কারণে ফুলে গেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে সিট না পাওয়ায় ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এর আগেও ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হারুন অর রশিদের সমর্থকেরা আব্দুর রশিদের সমর্থক যুবলীগের প্রচার সম্পাদক কোরবান উল্লাহর ঘরে মাঝরাতে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। কিন্তু কোরবান উল্লাহ বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে তাকে উদ্ধার করে। আহত কোরবান উল্লাহ বলেন, গতকাল আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টার সময় পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামের ওয়াপদা বঁাধের স্লুইসগেটের পাশে পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হাই ও ৯নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত মেম্বর হারুন অর রশিদ (হারুন খঁা) তার আত্মীয় স্বজন ও সমর্থকদের হুকুম দেয় তাকে হত্যা করতে। তাদের হুকুমমত পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামের মৃত আবদুল খঁার ছেলে জাহেদ খঁা, মৃত নাজমুল খঁার ছেলে লতিফ খঁা, ওয়াপদা বঁাধে বসবাসরত নজরুল প্রামানিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক, মোজাহার প্রামাণিকের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন প্রামাণিক, গোলাম খঁার ছেলে মাসুদ খঁা, আমিরুল খঁার ছেলে রুবেল খঁা, নজরুল খঁার ছেলে হাসান খঁা ও আনিস প্রামাণিকের ছেলে আরিফ প্রামাণিকসহ আরো অনেকে লাঠি সোটা নিয়ে আমার উপর ঝঁাপিয়ে পড়ে। এসময় আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে জখম করে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আমার আত্মীয়—স্বজন আমাকে চিকিৎসার জন্য ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। তিনি আরও বলেন, নব নির্বাচিত মেম্বর হারুন অর রশিদ (হারুন খঁা) একজন বিএনপি সমর্থক।

আহত হাসিনুর রহমান বলেন, আনুমানিক বেলা সাড়ে বারটায় ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ-এর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও উক্ত ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত মেম্বার হারুন অর রশিদের (হারুন খঁা) হুকুমে পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামের মোজাহার প্রামাণিকের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন অতর্কিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে। এসময় মোফাজ্জল হোসেন ধাক্কা দিয়ে আমাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এদিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই ও মেম্বার হারুনের নির্দেশ তামিল করতে মোফাজ্জল হোসেনের সাথে যোগ দেয় পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামের মৃত বক্কার হোসেনের ছেলে আলাল, আজাহার প্রামাণিকের ছেলে আনিস প্রামানিক (আন্নিস) ও একই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে একরামসহ আরো অনেকে। এ সময় বঁাচাও বঁাচাও বলে আমি চিৎকার করলে আশ পাশের বহুলোকজন আমার আর্তচিৎকার শুনে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। এসময় হামলাকারীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে ভাঙ্গুড়া থানায় এই আক্রমণের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মধু জানান, পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত মেম্বার হারুন অর রশিদ ও তার সমর্থক, আত্মীয়—স্বজন ও কতিপয় দূর্বৃত্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে পরাজিত প্রার্থী আব্দুর রশিদের সমর্থকদের উপর বেপরোয়া হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হয়। পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক কোরবান উল্লাহ আহত অবস্থায় জ্ঞান হারাবার পর মেম্বর হারুন অর রশিদ (হারুন খঁা) তার আত্মীয় স্বজন, দলবল ও সমর্থকদের নিয়ে পাড় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হাসিনুর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করে আক্রমণ চালায়। পরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শাকিল ও তিনি দলীয় লোকজন নিয়ে পাড় ভাঙ্গুড়ায় এসে আক্রান্ত হাসিনুর রহমান ও তার পরিবারকে উদ্ধার করেন।

নির্বাচনে উক্ত সহিংসতা ও সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের উপর এহেন আক্রমণের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলকে এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আক্রমণ ও মারপিটের ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য (পাবনা-৩) আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন আক্রমণকারীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ফয়সাল বিন আহসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উক্ত ঘটনার মামলা হয়েছে অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। সর্বশেষ জানা গেছে, সহিংস এই আক্রমণের ফলে পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে গুরুতর আহত কোরবান উল্লাহর পরিবার চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আহত কোরবান উল্লাহ পাড় ভাঙ্গুড়া গ্রামের আলহাজ মাওলানা আব্দুল মান্নান দরবেশের পুত্র।