পাবনায় সুস্বাদু ও রসালো ফল তালের সমারোহ

কথায় বলে তাল পাকা গরম! ভাদ্র মাসের গরমে বাজারে প্রচুর পাকা তালের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। তবে শ্রাবণের শেষ থেকেই দেশের গ্রামে-গঞ্জের হাটে-বাজারে পাকা তাল উঠতে আরম্ভ করে।

পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণ ভাসে বাতাসে। তাল অত্যন্ত সুমিষ্ট এবং রসালো একটি ফল। তাল গাছ পাম গোত্রের একটি অন্যতম দীর্ঘ গাছ। এই গাছের পাতাগুলো পাখার মতো ছড়ানো থাকে।
ফল হিসেবে তাল এবং এর পাতার বহুমুখী ব্যবহারের কারণে তালগাছ জনপ্রিয়। তাল গাছের পাতা থেকে তৈরি হয় গরমে আরামদায়ক পাখা। গরমে আরামদায়ক ফলে এই আধুনিক যুগেও তালের পাখার চাহিদা এখনও কমেনি। তালগাছের প্রায় প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ। পাখাতৈরি ছাড়াও তালপাতার চাঁটাই, ঘরের ছাউনি, মাদুর, খেলার পুতুল তৈরি করা হয়।

একসময় তালপাতা লেখার কাজে বহুল ব্যবহৃত হতো। তালপাতায় লিখে তা সংরক্ষণ করা হতো। তালের কান্ড দিয়ে নৌকা তৈরি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বাড়িও তৈরি হয়।

ফল এবং বীজ দুই-ই বাঙালির প্রিয় খাদ্য তালিকায়। যখন তাল ছোট থাকে তখন তালের মধ্যেকার নরম রসালো শ্বাসের চাহিদা থাকে ব্যাপক। আবার পাকা তালের চাহিদাও প্রচুর। মিষ্টি ঘন নির্যাস বের করা হয় তাল থেকে। বাজারে সচরাচর দুই ধরনের তাল দেখা যায়।

একটি কালো এবং অন্যটি একটু লালচে বর্ণের। তালের নির্যাস থেকে নানা রকমের পিঠা তৈরি করা হয়। তালের রস আটার সাথে মিশিয়ে বিশেষভাবে তেলে ভাজা হয়। এর বাইরেও তালের ব্যবহার রয়েছে। রস দুধ এবং চিনি দিয়ে ঘন জ্বাল দিয়েও খাওয়া হয়। তালের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। তালে রয়েছে ভিটামিন এ বি ও সি।

এছাড়াও জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এর সাথে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তাছাড়া তাল থেকে মিছরি তৈরি করা হয়।

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজারের একটি অংশ তাল বিক্রির জন্য লোকমুখে তালের হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেখানে হাটবারে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর তাল। বাজারে দুই ধরনের তাল রয়েছে। একটির রং কালো আর একটি গাঢ় লালের মাঝে হালকা কালোর ছোপ। তবে কালো রঙের তালের চাহিদাই বেশী। কারণ এতে রস বেশী আর খেতেও মিষ্টি। ক্রেতাসমাগমও চোখে পরার মত।

বাজারের একেবারে শেষ দিকে বসছে পাকা তাল বেচাকেনার হাট। একটু দূর থেকেই ভেসে আসে মিষ্টি ঘ্রাণ। ছোট বড় নানা সাইজের তাল পাওয়া যায় এখানে। একেকটি বড় তাল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ছোট ও মাঝারি আকারের তাল ২৫ থেকে ৩০ টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তাল কেনার সময় নাকের কাছে টেনে একবার হলেও ঘ্রাণ নিতে ভুল করেন না ক্রেতারা। এটাই মনে হয় এ সময়ের ফরমালিনমুক্ত ফল। স্থানীয় তাল ছাড়া বেশীরভাগ তাল আসছে সাঁথিয়া উপজেলার দুলাই থেকে। সেখানে প্রচুর তালের উৎপাদন হয়।

এ বাজারে বিক্রি করতে আসা হালিম মিয়া জানান, প্রতি বছর এ সময়ে পাকা তালের চাহিদা থাকে বেশী। হাটবার গুলোতে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তাল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, বাজারে পাষ্ট্রচুর তাল রয়েছে কিন্তু দাম বেশী। এ সময় আরও একটু দাম কম হওয়ার কথা।