যশোরের মনিরামপুরে ‘কলাপাতায় ভাত খেয়ে’ ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টা!

এক সময় ছিলো গ্রাম-গঞ্জে বড় ধরণের কোনো খানা-পিনার অনুষ্ঠান হলেই সেখানে খাবার পরিবেশন করা হতো কলাপাতায়। এখন আধুনিকতার যুগে এসে সেই কলাপাতায় ভাত খাওয়ার রেওয়াজ উঠেই গেছে।

ঠিক এমন সময় বিলুপ্ত এই রেওয়াজ নতুন প্রজন্মকে দেখাতে ও ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মদনপুর সম্মিলনী ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক শফিয়ার রহমান। গত শনিবার (১৫ জানুয়ারি-২০২২) দুপুরে মণিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মদনপুর সরদার বাড়িতে এক পারিবারিক পিকনিক ও বিনোদনের আয়োজন করে। সেই পিকনিকে অংশ নেওয়া ছোট-বড় সকলকেই ভাত খেতে দেওয়া হয় কলাপাতায়। এসময় কলাপাতায় ভাত খেয়ে সকলেই খুব আনন্দ অনুভব করে। দুপুরের খাওয়া শেষে নাচ-গান করে নতুন বছরকে বরণ করে নেন।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- কলাপাতায় ভাত অথবা অন্য খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারী? ১) শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিতে কলাপাতার রসে খুব উপকার মেলে। চর্মরোগ, আমাশা, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তাল্পতায় কলাপাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী। তাছাড়া, লিভারের সমস্যার সমাধানেও কলাপাতার রস খুব উপকারী। ২) কলাপাতায় খাওয়া বঙ্গ সমাজের রীতি। শুধু বঙ্গ সমাজ কেন? দক্ষিণ ভারতেও কলাপাতায় খাওয়ার প্রচলন আছে। এখনও অনেক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় কলাপাতা। কলাপাতায় খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। ৩) স্টিলের বা কাচের প্লেট সাবান জল দিয়ে খুব ভাল করে ধোওয়ার পরেও সাবানের রাসায়নিক কণা প্লেটে লেগে থাকতে পারে। কিন্তু কলাপাতা সাবান দিয়ে ধোওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই কলাপাতায় খাবার খেলে তা থাকে রাসায়নিকমুক্ত। ৪) কলাপাতায় পলিফেনল নামের একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকে। গ্রিন টি-তেও থাকে এই পলিফেনল। যখন কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন খাবারের সঙ্গে এই পলিফেনল মিশে শরীরে প্রবেশ করে। এই পলিফেনল যুক্ত খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ৫) কলাপাতা পরিবেশ বান্ধব। এটি খুব সহজেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তাই পরিবেশ দূষণেরও কোনও আশঙ্কা থাকে না। আসুন, আমরা কলাপাতায় ভাত খাওয়ার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি।