রংপুরের পীরগঞ্জে সাধক কবি কাজী হেয়াত মামুদ (রহ:) মৃত্যুবাষির্কী পালিত

রংপুরের পীরগঞ্জের প্রত্যন্ত পল্লী চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামে শায়িত মধ্যযুগীয় সাধক কবি কাজী হেয়াত মামুদ (রহ:) এর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কবির নামে ঝাড়বিশলা হেয়াতুল উলুম আলিম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আবৃতি, ছড়া, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা, পুরস্কার বিতরণ ও দোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

এতে রংপুরের শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক রেজাউল করিম, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মু: মাহমুদ হোসেন মন্ডল, চৈত্রকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আরিফুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ১৬৮০ থেকে ১৭০০ খিস্টাব্দে অর্থাৎ সাড়ে তিন’শ বছরের অধিক কাল আগে যে কোন এক সময়ে মধ্যযুগীয় সাধক কবি কাজী হেয়াত মামুদ (রহ:) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলাধীন চৈত্রকোল ইউনিয়নের ঝাড়বিশলা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম কবির খাঁন, দাদা দাউদ খাঁন। লেখনির মাধ্যমে তিনি অমর হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্য নিয়ে তিনি বেশ কিছু পান্ডলিপি রচনা করেন।

এর মধ্যে জঙ্গনামা বা মহরম পর্ব, সর্বভেদ বানী, হিতজ্ঞান বানী ও আম্বিয়া বানী উল্লেখযোগ্য।”যার বিদ্যা নাই সে জানে না ভাল মন্দ, শিরে দুই চক্ষু আছে তথাপি সে অন্ধ” এ রকম বেশকিছু আধ্যাতিক বানী কবির রয়েছে। কবি আধ্যাতিকতায় এলাকায় ওলি আউলিয়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৭৬০ থেকে ১৭৬৫ খিস্ট্রাব্দের মধ্যে যে কোন এক সময়ে ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সে কবি ইন্তেকাল করেন। কবির মৃত্যুর পর ঝাড়বিশলায় মাজার গড়ে উঠে।

সেখানে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ কবির মাজার জিয়ারতে আসেন। কবির স্মৃতি ধরে এলাকার দানশীল ও ধর্মপ্রাণ মানুষ কবির নামে ঝাড়বিশলায় একটি আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। উপজেলা সদরেও কবির নামে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

২০০৩ সালের তৎকালীন সরকারের গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির এমপি কবির মাজার জিয়ারতে আসেন। পরে প্রতিমন্ত্রীর উদ্যোগে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী ১৭ ফ্রেরুয়ারী ৫ ফাল্গুন পালিত হয়ে আসছে। এবছর ব্যতিক্রমভাবে ১৮ ফেব্রুয়ারী কবির জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়।

প্রতিবছর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়ে থাকে। এছাড়াও সারারাত ব্যাপি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিল, জিকির, দোয়া, ফতেহপাঠ ও তবারক বিতরণ করা হয়ে থাকে। সেখানে সরকারের উর্ধতন মহলের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকেন। এছাড়াও সরকারি জেলা পরিষদের উদ্যোগে কবির স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপিত করা হয়েছে।