সফলতার আলো দিয়ে

সাতক্ষীরার ফসলের মাঠ থেকে উঠে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত সহিষ্ণু বিনা সরিষা ৯

রবি মৌসুমের যত ফসল আছে তারমধ্যে সব থেকে স্পর্ষকাতর ফসল হচ্ছে সরিষা। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে বারবার ক্ষত বিক্ষত সাতক্ষীরার ফসলের মাঠে যখন সব ফসল ক্ষতিগ্রস্থ তখন বিনা ৯ সরিষা কৃষকের মুখে ছড়াচ্ছে সফলতার আলো।

একটি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও হাড়দ্দহা গ্রামের আলোকিত কৃষক আবু সেলিম জানান, যখন জেলার কৃষকরা সরিষা চাষ শুরু করেছে তখনই সাতক্ষীরা উপকুলে আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় জওয়াদ। কৃষকদের হাজার হাজার হেক্টর সরিষা ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়। তার ক্ষেতটিও টান ১১দিন পানিতে আটকে যায়। মনে হয়েছিল ফসল হয়ত আর ঘরে উঠবে না। তারপরও শক্তিশালী শেকড় ও কান্ড নিয়ে বেড়ে ওঠে বিনা সরিষার ক্ষেত। এরমধ্যে আরও তিনবার আসে অসময়ের বৃষ্টি তাতেও ক্ষতিগ্রস্থ হয় অন্যান্য ক্ষেত। কিন্তু বিনা সরিষা ৯ জাতের ফসল কৃষকের ক্ষেতে বলতে গেলে কোন ক্ষতিই করতে পারে নি। রবিবার এঅঞ্চলের কৃষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরিষা কর্তন করে ও ঘরে ফসল উঠিয়ে পেয়েছে সফলতা ও আশার আলো। জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত সহিষ্ণু বিনা সরিষা’র বাম্পার ফলনে ফসলের মাঠ থেকে হাসি মুখ নিয়ে উঠে আসছে সাতক্ষীরার সরিষাচাষীরা।

বাংলাদেশের পরমাণু কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বিনা সরিষার মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রামে।

শতাধিক সরিষাচাষীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবস শেষে রবিবার সকাল থেকে হাড়দ্দহার মাঠের চাষকৃত সরিষা কর্তন করে কৃষকরা।

শনিবার বিকেলে কৃষকরা তাদের চাষের অভিজ্ঞতার কথা শোনান পরমানু কৃষি বিজ্ঞানী ও সাংবাদিকদের।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরমানু কৃষি বিজ্ঞানী ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিনা’র মহাপরিচালক ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. আব্দুল মালেক, ড. রেজা ইমন।

আলোচনা করেন সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্য’র আহবায়ক প্রবীণ সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের সেলিম রেজা, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমান।

বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্র’র তথ্যানুযায়ী এ মৌসুমে সাতক্ষীরার কৃষকদের মাঝে চাষাবাদের সার্বিক সুবিধাপ্রদানসহ দেড় হাজার কেজি বিনাসরিষা-৯’র বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে যা প্রায় তিন শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।

কৃষক নুরুল আমিন জানান, আমার ক্ষেতের সরিষার সুন্দর ফলন হয়েছে। ৩-৪ বছর ধরে চাষ করছি। লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা এমন কী ঘাস ও আগাছার মধ্যেও ফলন অনেক বেশি। বিনা-৯ জাতের সরিষা অন্য যেকোন জাতের তুলনায় ফলন বেশি দেয়। পানিতে ডুবে থাকলেও এই গাছ মরে যায় না। এতে সার খুব কম লাগে। তাছাড়া এর রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।

কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, তারা ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা পেয়েছেন বিঘাপ্রতি। বেশিমাত্রায় সার প্রয়োগের কোন প্রয়োজন নেই জানিয়ে তারা বলছেন, খানিকটা কাদামাটিতে ভিজে থাকা মাঠও বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ উপযোগী।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহা গ্রামের সরিষা ক্ষেতগুলিতে দঁাড়িয়ে কৃষকদের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
ঘাস ও আগাছার প্রতিকূলতা সহ্য করেও উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা অন্য যেকোন জাতের তুলনায় অধিক মাত্রায় ফলন দিয়েছে।

ড. বাবুল আকতার বলেন, বিনা-৯ জাতের সরিষার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অনেক প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে। এ বছর সাতক্ষীরায় ৮০০ বিঘা জমিতে এই চাষ হয়েছে। আগামীতে কৃষকদের আগ্রহ অনুযায়ী তা আরও সম্প্রসারণ করা হবে। উপকূলের লবণাক্ত মাটি ও পানিতে বিনা-৯ জাতের সরিষার চাষ হাসি ফুটিয়েছে সাতক্ষীরার কৃষকদের মুখে। দূর্যোগ ও জলাবদ্ধতার প্রতিকূলতা রোধ করেও মাত্র ৯০ দিনে চাষীদের ঘরে উঠছে এই সরিষা। এই স্বল্পতম সময়ে চাষীরা পেয়েছেন বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ বিনা-৯ জাতের তেলবীজ। চলতি বছর সাতক্ষীরায় প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। এজন্য কৃষিবিভাগ ১০০ জন কৃষককে বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বোরো ও আমন চাষের মাঝে যে সময়টুকু পাওয়া যায় সেটুকুই বিনা-৯ জাতের সরিষা চাষে ব্যবহার করছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে এই জাতের চাষের ফলে তারা অনেকাংশে লাভবান হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, চারদিকে লবণাক্ত পানির মাছের ঘের তার ওপর অসময়ের বৃষ্টিতে সরিষা ক্ষেত ডুবে ছিল ১০ থেকে ১২ দিন। এতে ফলন কম হবার আশংকা থাকলেও বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টেটাই।