গৌরীপুরে পলাশকান্দা ট্র্র্যাজেডি দিবসে চার শহীদদের স্মরণ
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি দিবস পালন করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) চাঁদের হাট অগ্রদূত শাখা ও যুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রভাতফেরি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ ও পথসভায় ‘পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি’ তুলে ধরা হয়। শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিজয়’৭১-এ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বজন সমাবেশের সহসভাপতি কবি শামীমা খানম মীনা। সঞ্চালনা করেন চাঁদের হাট অগ্রদূত শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন। ৭১’র রণাঙ্গন ও পলাশকান্দা ট্রাজেডি’র ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন গৌরীপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক মো. রইছ উদ্দিন।
বক্তব্য রাখেন উদীচী গৌরীপুর সংসদের সভাপতি ওবায়দুর রহমান, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সাধারণ সম্পাদক সেলিম আল রাজ, ব্যবসায়ী চন্দন এস প্রমুখ। সংগীত পরিবেশন করেন উপজেলা স্বজনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক গোপা দাস, আমিরুল মোমেনীন, গৌরীপুর রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান রাজিব, নারগিস আক্তার, মাহমুদা আক্তার লিপি, মাহমুদা আক্তার রিপা।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস। গৌরীপুরসহ সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পাক হানাদার বাহিনী তখন দিশেহারা। এ সময় মুজিব বাহিনীর একটি গেরিলা দল গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম পলাশকান্দায় অবস্থান নেয়। পলাশকান্দায় অবস্থানরত মুজিব বাহিনীর গেরিলা দলের উদ্দ্যেশ্য ছিল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী পাক হানাদার বাহিনীর কনভয় ও ক্যাম্পের উপর হামলা করা। কিন্তু একই গ্রামের অধিবাসী রাজাকার মজিদ মাষ্টার মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের অবস্থানের খবর অত্যন্ত সুকৌশলে পৌঁছে দেয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। সঙ্গে সঙ্গেই পাক হানাদার, রাজাকার ও আলবদরের সম্মিলিত বাহিনী পলাশকান্দায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়।
এসময় মুজিব বাহিনীর দলটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈশ্বরগঞ্জের মাইজকা হানাদার ক্যাম্প আক্রমনের জন্য রওয়ানা হবার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে হানাদার বাহিনী তিনদিকে ঘিরে ফেলে এবং বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে থাকে। কমান্ডার মুজিবুর রহমান ও পাল্টা গুলি ছোঁড়ার আদেশ দেন। আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এসময় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোললেও পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেই সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় জসিম উদ্দিন হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে শহীদ হন। হানাদারের হাতে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম।
জানা যায়, ধরাপড়া তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে পরে ব্রহ্মপুত্রের নদীর চরে তাদের চোখ বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে উপরে ফেলে হত্যা করে। পরদিন ১ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে পলাশকান্দায় সমাহিত করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন