জাপান রূপকথায় জার্মানির বিদায়, নকআউটে স্পেন

কাতার বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে যাচ্ছে চমকের পর চমক। প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারানো জাপান নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে স্পেনকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। এতে করে গ্রুপ ‘ই’থেকে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে এশিয়ান পরাশক্তিরা।

আর জাপানের জয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। একই গ্রুপের আরেক ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে হারালেও সেটা যথেষ্ট ছিল না জার্মানদের জন্য। তাদের দরকার ছিল স্পেনের অপরাজিত থাকা।

স্পেন জাপানের সঙ্গে ড্র করলে গোল ব্যবধানে নকআউটে পৌঁছে যেত জার্মানি। তেমনটি হয়নি। ফলে জার্মানি বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই আর জাপানের সঙ্গে গ্রুপে রানার্সআপ হয়ে নকআউটে পৌঁছেছে স্পেন।

সমীকরণের মারপ্যাঁচে থাকা জটিল এই গ্রুপের শেষ ম্যাচ ডেতে চার দলেরই সম্ভাবনা ছিল নকআউটে যাওয়ার। দুই ম্যাচে শুরুতে গোল পেয়ে যায় দুই ফেভারিট।

১০ মিনিটে কোস্টারিকার বিপক্ষে জার্মানিকে লিড এনে দেন সার্জ জিনাব্রি আর ১১ মিনিটে জাপানকে প্রথম ধাক্কা দেন স্পেনের আলভারো মোরাতা। তখন মনে হচ্ছিল ইউরোপের দুই পরাশক্তির জন্য রাতটা জয়ের বার্তা নিয়েই এসেছে। তবে নাটকের তখন অনেকটাই বাকি।

দৃশ্যপট পাল্টে যায় বিরতির ঠিক পরপর। ৪৮ মিনিটে বক্সের বাইরে বল পেয়ে চমৎকার শটে স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন রিতসু ডোয়ান। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১-১। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে জাপানের দরকার ছিল জয়।
সে লক্ষ্যে স্পেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে সামুরাই ব্লুরা। এমন একটি আক্রমণ থেকে জাপান পায় তাদের দ্বিতীয় গোল। ৫১ মিনিটে ডোয়ানের পাস বক্সের একেবারে ভেতরে খুঁজে নেয় আও তানাকাকে। কাছ থেকে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি ও দলকে লিড এনে দেন।

জাপানের এই দ্বিতীয় গোল নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। অনফিল্ড রেফারি বল গোললাইনের বাইরে গেছে মনে করে গোলটি বাতিল করে দেন। তবে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্টের সাহায্যে দেখা যায়, বল লাইনের বাইরে যায়নি ও গোল বৈধ। ফলে জাপান ফিরে পায় নিজেদের গোল।

জাপানের লিড নেওয়া মানে ছিল জার্মানির জন্য বিপদ। তবে নিজেদের ম্যাচে তারা আরও বিপদে পড়ে যখন কোস্টারিকা দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল স্কোর করে।

৫৮ মিনিটে ইয়েলতসিন তাহেদা ও এর ১২ মিনিট পর হুয়ান ভারগাসের গোলে হকচকিয়ে যায় জার্মানরা। কোস্টারিকা জয় পেলে আর স্পেন হারলে বাদ পড়তে হতো স্পেনকেও।
৭৩ মিনিটে কাই হাভের্টস গোল করে জার্মানিকে ম্যাচে ফেরান। এরপর একচেটিয়া খেলে আরও দুটি গোল আদায় করে নেয় জার্মানি। ৮৫ মিনিটে হাভের্টসের দ্বিতীয় গোল ও ৮৯ মিনিটে নিক্লাস ফুল্ক্রুগের গোলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-২। কিন্তু সেটি জার্মানির জন্য যথেষ্ট ছিল না। গোল ব্যবধানে তারা তখনো ৫ গোলে স্পেনের চেয়ে পিছিয়ে।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে দুবার পোস্টে শট লাগে জামাল মুসিয়ালার। একবার একেবারে কাছ থেকে জিনাব্রির শট ঠেকিয়ে দেন কোস্টারিকার গোলকিপার কেইলর নাভাস। কোনোভাবেই গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারছিল না জার্মানি। একই সঙ্গে আরেক ম্যাচে স্পেনও দেখা পাচ্ছিল না গোলের।শেষ দিকে স্পেন বারবার আক্রমণ চালিয়েও জাপানের রক্ষণদুর্গ ভাঙতে পারেনি। ফলে ম্যাচে পরাজয় মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের।
স্পেনের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিত হয়ে যায় জার্মানির বিদায়ও। টানা দুই বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল জার্মানি।

শেষ ১৬ তে স্পেন খেলবে মরক্কোর বিপক্ষে। আর ক্রোয়েশিয়ার মোকাবিলা করবে ই-গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জাপান।