অধিভুক্তদের স্বতন্ত্র ক্যাম্পাস বা বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া চমৎকার সমাধান হতে পারে না কি?

রুবাইত হাসান : সাত কলেজ অধিভুক্ত করার সময় আনন্দে নেচেছিল অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীরা।কিন্তু বিতর্কিত সব কর্মকাণ্ডের জন্য অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীরা আজ নিজেরাই নুয়ে পড়েছে।পড়ালেখায় অমনোযোগী আর নিয়মবর্তিতা হারানোর সুযোগ মিলেছে।ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর অভিযোগ কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছে, ঘোরাঘুরি করছে ইত্যাদি।তাদের এ আড্ডায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঐতিহ্য হারাচ্ছে, এখানকার ছাত্ররা তাদের ছোঁয়াচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আরো সব অভিযোগে অধিভুক্ত বাতিল উচিত বলে মনে করে ঢাবিয়ান বড়াই করা এসকল শিক্ষার্থীরা।অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থী কোথাও দাবি করছে না আমরা ঢাবিয়ান।অথচ ঢাবির এসকল শিক্ষার্থীদেরই বাণী “তোমরা নিজেকে ঢাবিয়ান মনে করো না”।বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চোরের মন পুলিশ পুলিশ। ঠিক সাদৃশ্য বিদম্যান প্রবাদ বাক্য আর এদের আচরনে।নিজেদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে রাজপথে এক সহপাঠীর চোখ হারিয়েছে, অপমানিত হয়েছে অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীরা।

তবে এর মানে যে পুলিশ, প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্র দায়ী তা কিন্তু না।কারন গুটি কয়েক বেয়াদব পুলিশ মানেই প্রশাসন না আর এদের গোঁড়ামি করে তৈরি করা তাৎক্ষনিত আইন কোন ভাবেই রাষ্ট্র পরিচালিত না।তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র জোটের উপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে মিডিয়া পাড়ায় যে আইলা ঝড় তোলা হয়েছে তা কোন ভাবে ছাত্রলীগ না।টুপি পড়লেই খাঁটি সুন্নাতী আর দাড়ি রেখে জুব্বা পড়লেই কেবল ঈমানদার হওয়া যায় না।সুকৌশলে ছাত্রলীগ মনোগ্রাম ব্যবহার করে কে বা কারা এ অস্থিরতা টুর্নামেন্ট খেলোয়াড় কিংবা রেফারীগিরি করছে তা খুঁজে বের করে জাতির সামনে পেশ করা প্রশাসনের প্রতি দাবি।

শ্রাবনী মেরেছে, কাপড় খুলতে চেয়েছে বিষয়টি সম্পূর্ন শুদ্ধ নয়।তবে শ্রাবনীর কাপড় খোলার দৃশ্যটি অবশ্যই আমাদের কাঁদিয়েছে।সম্ভ্রমহানীর যে কার্যসম্পাদন শ্রাবনী করতে গিয়েছে তা কোন ভাবেই মেনে নেবার নয়,তবে একটি ভুলের কারনে জাতির সামনে ভিলেন বানানোর সাথে সাথে শ্রাবনীর সাথে পূর্ব ঘটে যাওয়া দৃশ্য গুলো প্রকাশ করেনি কিংবা পারেনি মিডিয়া।এদিক থেকে শ্রাবনীকে এক প্রকার মৌন ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে তাও স্বীকার্য।আপনাকে কেউ মারলে সেটা হয় “সে মেরেছে”। কিন্তু আপনিও যখন তাকে মারবেন তখন মেরেছে বললে তো হবে না।হয়েছে তো মার-পিঠ।শ্রাবনী আহত,আশাঙ্গাজনক ভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।তার নামে ফেইসবুকে অহরহ আইডি খুলেও জাতিকে বিভ্রান্ত করছে এ চক্র। আপনি বলছেন নাটক ! তাহলে আমি আপনার নাটকের কথা বলি, এক লোক ২০ বছর পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়লো হজ্ব করে আসলো এক দিন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে নাচতে দেখলেন। তখন আপনার মন্তব্য কি? নাচতেই দেখলেন, কে নাচাচ্ছে, কেন নাচছে সেটা আর মন্তব্য করার আগে প্রয়োজন মনে করলেন না।এক দৃশ্যে ২০ বছর ভুলে গিয়ে ভন্ড উপাধী দিয়ে দিলেন।আর এ্যাডভান্স দিয়ে আন্তর্জাতিক বক্তা এনে টুপি পড়ে মাওলানা সাহেবের ওয়াজ শুনে আপনার মন্তব্য বিশাল পরহেজগার বান্দা।

অবরুদ্ধ শিক্ষককে উদ্ধার করতে যাওয়া যদি পাপ হয়! তবে ভবিষ্যৎ-এ কেউ শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নিবে বলে মনে হয় না।ছাত্রলীগ মারলো সেই ছবিই কেবল ভাইরাল করা হয়েছে, কিন্তু ছাত্রলীগ মার খেল, হাসপাতালে অসংখ্য কর্মী শয্যাশায়ী এটা আর দেখলেন না।আইভীর উপর হামলা করা হয়েছে দেখলেন।কিন্তু ইস্যু কে তৈরি করে, প্লে টা কে করেছিল এটা দেখলেন না।খাদিজাকে কোপানো হলো দেখলেন, বদরুলের ফাঁসিও চাইলেন, কিন্তু বদরুল খাদিজার একশ এক অন্তরঙ্গ মহূর্তের ছবি গুলো আর দেখলেন না।ইডেন ছাত্রী যুবক কোপালো, আপনার মন্তব্য ঠিক হয়েছে, দু চার টা এমন হওয়া দরকার, মেয়ের সাহস আছে নিশ্চয় ছেলে কিছু করেছে।কিন্তু যুবক যে নির্দোষ তার ফলোআপ জানার প্রয়োজন মনে করলেন না।কিন্তু আপনি গলা উঁচিয়ে মহাবাণী ছুঁড়ছেন।এতটুকু কমনসেন্স বিষয় গুলো মাথায় না আসলে আপনি রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিকই না।রাষ্ট্র আজও মৌলিক অধিকার গুলোই পূরণ করতে পারে নি বলে আপনার যা গর্জন, আমার প্রশ্ন শুধু আপনার মৌলিক অধিকার গুলো পূরণ করতে রাষ্ট্রকে সহায়তা করেছেন কতটুকু?রাষ্ট্র একাই সরকারের বাপের না,সরকার কিন্তু শেখ হাসিনা না।জনগণ মনোনীত শেখ হাসিনা।অথচ রাষ্ট্রকে ভাবছেন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষ হিসাবে।আপনাকে শেখ হাসিনার পক্ষ নিতে আমি বলিনি তবে নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্র পক্ষ আপনি যদি নন, তবে বলবো আপনি ভেসেই এসেছেন পাকিস্তান থেকে এদেশের কেউ নন।

ছাত্রলীগ নামধারী যে পিচাশেরা ছাত্রলীগকে কলুষিত করার মাস্টার প্লান করছে,সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে যারা অস্থিরতা চালাচ্ছে এরা কোন শিক্ষার্থীই কি না সে ব্যাপারে আমার দৃঢ় সন্দেহ আছে।আবার,আপনি যদি বলেন, ছাত্রলীগ অধিভুক্ত বিরোধী তাহলে আমি বলি কী, সাত কলেজ কি ছাত্রলীগ শূন্য?এতে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এর বিরোধীতা বা পক্ষপাতিত্ব করার কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি তা স্পষ্ট।

তাছাড়া যারা আন্দোলন করতে চায় তারা করবে বলেও মতামত দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।আমি আরেকবার বলছি,ফার্মের মুরগির টি টি কিংবা কাওয়াদের কা কা কখনোই লীগের কর্মসূচী বা মিছিল নয়।অধিভুক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে পুতুল খেলা চলছে এর মাস্টার মাইন্ডদের চিহ্নিত করতে হবে।শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি আলোয় না হয়, চাকরি কিংবা সার্টিফিকেট আর ম্যাসিং ড্রেসের গলার টাই কিংবা নামের টাইটেল কেন্দ্রীক হয়, যদি না থাকে মানবিকবোধ তবে বন্ধ করে দেওয়া হোক এ শিক্ষা।না হয় শিক্ষিত সমাজের ঐ সব গুরুত্বপূর্ণ আসনের শয়তান গুলিকে টেনে হিঁছড়ে জঙ্গলে নির্বাসন দেয়া হোক। আমরা শিক্ষার গায়ে কোন কলঙ্কের, বোধহীনতার, অমানবিকতার চিহ্ন মাত্র দেখতে চাই না।

ক্যাম্পাস নষ্টের অভিযোগ টা আমি বুঝলাম।পার্ক গুলো যে একেকটা নষ্টামির উৎস,প্রাণ কেন্দ্র, কুকর্মের আঁখড়া এটা ওই শিক্ষার্থীদের বুঝে আসে না?

পার্ক গুলোতে প্রশাসনের খাকি পোশাক পরে যারা পকেট গরম করছে আর অবাধে কুকর্ম চালানোর তালি বাজাচ্ছে এদের বিরুদ্ধে কেউ আন্দোলন করছে না কেন?কেন পার্ক গুলোতে হয় সুশাসন ব্যবস্থা নয়তো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না?কেন এক ফোটা অর্গাজমকে রাস্তা কিংবা ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে দেখে কেঁদে দেয় আর এসব বন্ধে ভূমিকা রাখার প্রয়োজন মনে করে না?

টিভির পর্দায় বাঘ হরিণকে ধরতে যাবে, এমন সময় সৃষ্টিকর্তার নিকট আপনার হাত তুলে করুন আবেদন ধরতে যেন না পারে আর আপনি পরিবেশ রক্ষাকারী পাখিদের রোষ্ট চিবাতে গুলি লাগান একটি প্রাণীর বুকে কিংবা বাজার থেকে কিনে এনে জবায়।আপনাকে সিংহ বললে আপনি বেজায় খুশি, কিন্তু জানোয়ার বললে আপনি রাগি!

চালাকের ফ্লেবার নিয়ে বোকার মুখোশ পরে যারা বসে আছে, উজ্জল আবরণে যারা চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে এরা ভীষন ভাবেই ভয়ংকরী।
ঘটছে ভয়ংকরসব ঘটনা!

ঢাবিয়ানরা যেমন ক্যাম্পাসে অধিভুক্তদের দেখতে চায় না। তেমনি অধিভূক্তদের ক্যাম্পাসে সময় কাটানোর যৌক্তিকতা আছে। এত ঘাটাঘাটি না করে আর কারো ভালো, কারো মন খারাপ না করে অধিভুক্তদের স্বতন্ত্র একটি ক্যাম্পাস করে দেওয়া, স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া চমৎকার সমাধান হতে পারে না কি?

সকল বিষয় গুলো দ্রুততর সমাধান না করতে পারলে, ঢাবিয়ানদের আন্দোলন কেন হবে? বরং ঢাবিরই উচিত অধিভুক্ত থেকে সরে আসা।

লেখক: সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব