অফিস আন্ধারঘরত টাকা খায়:সভাপতি নাগদাহ আলাইকুমারী সমবায় সমিতি

অফিস লিগ্যাল কোন ট্যাকা খায় নাহ।আনলিগ্যাল আন্ধারঘরত আনসিন খায়।কোথায় কখন কত টাকা দিছি এটা প্রকাশ করার মতো নয় ফাঁস হওয়া ভয়েস রেকর্ডে এমনটাই বলেছেন রংপুরের পীরগাছার নাগদাহ আলাইকুমারী সমবায় সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নে অবস্থিত নাগদাহ আলাইকুমারী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সমিতির জন্য প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪২ লক্ষ টাকার অর্থের নামমাত্র কাজ করে আত্মসাৎ ও সমিতির সাধারণ সদস্যদের সঞ্চয়,শেয়ার ও বিগত সময়ে গাছ বিক্রির টাকার হিসাব না দিয়ে সাধারণ সদস্যদের সাথে বৈষম্যমূলক,অসাংবিধানিক ও অসাংগঠনিক আচরণের মাধ্যমে সমবায় আইন পরিপন্থী কাজ করেছে বলে অত্র সমিতির সদস্য মাসুদ রানা বাদি হয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক,জেলা এলজিইডি ও জেলা সমবায় অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ১৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে।পরবর্তীতে আবারো সমিতির মাসিক মিটিংয়ে সাধারণ সদস্যরা হিসেব চাইলে সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন,অফিস লিগ্যাল কোন ট্যাকা খায় নাহ।আনলিগ্যাল আন্ধারঘরত আনসিন খায়।কোথায় কখন কত টাকা দিছি এটা প্রকাশ করার মতো নয়।

অভিযোগকারী মাসুদ রানা ও সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পারুল ইউনিয়নের লোহারপুল হতে উত্তরে প্রায় ৩৮শ মিটার আলাইকুমারী নদী খনন করার জন্য ৩৫ লক্ষ ও দুই ধারে গাছ লাগানোর জন্য ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় (জাপান-আন্তর্জাতিক-উন্নয়ন-সংস্থা) জাইকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নাগদাহ আলাইকুমারী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। তাদের কারিগরি সহায়তা করেন এলজিইডি।

এদিকে মাসুদ রানার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পীরগাছা উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা প্রমাণের রিপোর্ট প্রদান করে পীরগাছা উপজেলা সমবায় অফিসার।সমবায় আইনের ৪৯ ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপর দায় নির্ধারণের জন্য উপজেলা সমবায় অফিসের সুপারিশ অনুযায়ী বিষয়টি পুনঃতদন্তের জন্য জেলা সমবায় অফিসের প্রশিক্ষক মোঃ নুরুন্নবী বসুনিয়াকে দলনেতা করে ও পীরগাছা উপজেলা সমবায়ের সহকারী পরিদর্শক মোঃ মাহমুদুল ইসলামকে সদস্য করে একটি কমিটি করে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস সবুর।নির্বাচনকালীন ব্যস্ততার জন্য আবারো ২৪ জানুয়ারি তদন্তের দিনক্ষণ ধার্য করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অপরদিকে একই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রংপুর এলজিইডি এর সামাজিক উন্নয়ন কর্মকর্তা (সোসিওলজিস্ট) লুৎফা খাতুন বুবলি জানান, প্রাথমিক তদন্তে সমিতির সাধারণ সদস্যদের সঞ্চয়,শেয়ার প্রকল্পসহ সমিতির আয় ব্যয়ের হিসেবে কোন প্রকার অসংগতি পাইনি।

একই অভিযোগ সমবায় ও এলজিইডি এর দ্বিমুখী রিপোর্ট নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।ভুক্তভোগীরা বলছে জেলা এলজিইডি এর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে এসে আমাদের কোন কথা না শুনেই একপাক্ষিকভাবে সরাসরি সভাপতি ও সম্পাদকের কথা শুনে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।এর মাধ্যমে বুঝা যায় সমিতির সভাপতির অফিসের সাথে টাকার লেনদেনের বিষয়টি সঠিক।আমরা হয়তো চূড়ান্ত রিপোর্টে ন্যায়বিচার পাবো না।সমিতির সভাপতি সেক্রেটারি টাকা দিয়ে সমবায় ও এলজিইডি অফিস ম্যানেজ করে ফেলছে।

নাগদাহ আলাইকুমারী সমবায় সমিতির সেক্রেটারি আবু সাঈদ জানান, ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডটি ভিত্তিহীন।সমিতির কিছু বিপথগামী সদস্য সমিতির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।সমিতির স্বার্থ পরিপন্থী কাজ করায় ইতিমধ্যেই অভিযোগকারী মাসুদ রানা (নয়ন) কে সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রংপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস সবুর ও প্রশিক্ষক নুরুন্নবী বসুনিয়া জানান,প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনের বিষয় আমরা দেখি না।এটি এলজিইডি এর এখতিয়ারভুক্ত।সমবায় আইন অনুযায়ী সমিতি চলছে কিনা।অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।সমিতির সভাপতি সেক্রেটারির তদন্তের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করে কৌশলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করে সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,এ বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখবো।যৌক্তিক কারণ ছাড়া সময় চেয়ে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে নাহ।

রংপুর জেলা এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী জানান,আমার মনে হয় সমিতির সভাপতি সেক্রেটারি হয়তোবা টাকা পয়সা নিছে।সমিতির অন্যান্য সদস্যদের হয়তোবা লভ্যাংশ দিচ্ছে নাহ।এজন্যই তারা অফিসের আনসিন টাকা খাওয়ার কথা বলতে পারে।এবিষয়ে আমি এখন একশনে যাবো।সমিতির সভাপতি সেক্রেটারিকে ডাকবো।তারা কেন অফিসের দূর্নাম করলো। কোথায় কাকে কত টাকা দিছে জিজ্ঞেস করবো।সার্বিক বিষয়ে আমি সমবায় অফিসারের সঙ্গেও কথা বলবো।