কলাপাড়ায় কৃষককে প্রানে মারার হুমকি দিলেন প্রভাবশালী নেতা

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আবদুল হক (৬০) নামের এক কৃষককে প্রাননাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে রসিব নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মুজার বাঁধ হইতে হাজীবাড়ির বাঁধ পর্যন্ত খাল খননে ভুয়া এলসিএস তৈরী করার প্রতিবাদে এই হুমকি প্রদান করা হয়।

হুমকি দাতা ব্যাক্তি পটুয়াখালী পৌর শহরের বাসীন্দা এবং একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। বর্তমানে ওই কৃষক আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।

কৃষকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের কৃষক আবদুল হক হাওলাদার এলাকার মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষে ওই খাল খননের জন্য প্রায় ৫ বছর আগে মৎস্য অধিদপ্তরে আবেদন করেন। খাল খননের জন্য তিনি বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাপও করেন। তার প্রচেষ্টায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় খাল খননের প্রকল্প পাশ হয়। পরে ওই খাল মেজারমেন্ট এবং খননের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য বিভাগের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বর্তমানে বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসে কর্মরত) সাইফুজ্জামান আবদুল হকের কাছে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানালে ওই প্রকৌশলী ভ‚য়া এলসিএস (চাষীদের নিয়ে কমিটি) গঠন করে। পরে রসিব নামের এক ব্যক্তিকে ওই খাল খনন কাজের তদারকি করতে দেখা যায়। এলসিএস কমিটিতে স্থানীয় চাষীদের নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় তারা ক্ষোভে ফুসে ওঠেন। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে আবদুল হক ২১ মার্চ মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২৮ মার্চ রসিব নামের ওই ঠিকাদার মুডোফোনে আবদুল হক হাওলাদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। মজিদপুর গ্রামের মৎস্য চাষি খলিলুর রহমান জানান, আমরা এই এলাকার প্রকৃত মৎস্য চাষী। আমার জানা মতে, মৎস্য সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের খাল খননের কাজ করতে হলে আগে প্রকৃত মৎস্য চাষী ও সুফল ভোগীদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু এ এলাকার কোন চাষীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই। অপর মৎস্য চাষী মোজাম্মেল হক বলেন, কমিটিতে এই এলাকার কেউ আছে বলে আমার মনে হয়না। দীর্ঘদিন আমরা দেখেছি, এই খাল খননের জন্য আবদুল হক হাওলাদার বিভিন্ন দপ্তরে দৌরঝাপ করেছেন। আজ তাকেই কমিটিতে রাখা হয়নি। আমরা তো দুরের কথা। বর্তমানে খালটি যারা খনন করছে তারা সঠিকভাবে করছে কিনা সেটার তদারকিতেও কেউ নেই। কৃষক আবদুল হক হাওলাদার বলেন, আমি এই খাল খননে সব দপ্তরেই ঘোরাঘুরি করেছি।আর আজ ঘুষ দিতে পারেনি বলে ভ‚য়া এলসিএস গঠন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আমাকে আজ মেরে ফেলার হুমকি দেয় রসিব। বর্তমানে আমি জীবনাশের হুমকিতে রয়েছি। এ বিষয়ে রসিব জানান, আমি তাকে কোন গালমন্দ করিনি। তার অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা, ভ‚য়া এবং বানোয়াট। তবে এলসিএসের মাধ্যমে ওই খালটি খনন করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিসের সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান বলেন, আমার কাজ শুধু কাজের স্কিম তৈরী করা। কে কাজ পেলো না পেলো সেটা দেখার বিষয় নয়। আমার সঙ্গে কোনদিন আবদুল হকে সঙ্গে দেখাই হয়নি, ঘুষ চাওয়া তো দূরের কথা। মূলত রসিব প্রভাব খাটিয়ে কাজ নিয়েছে। তার সঙ্গে না পেরে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল্লাহ জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান বর্তমানে বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসে কর্মরত রয়েছেন। তাকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাকা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।