খাগড়াছড়িতে টাক্সফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি-কে ফুলেল শুভেচ্ছা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা জেলা পরিষদের অন্তর্বতীকালীণ মনোনীত চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর নেতৃত্বে ১৫সদস্য শুক্রবার ১১ই ডিসেম্বর সকালে জেলা আওয়ামীলীগের কর্ণধার, জাতীয় সংসদ সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাক্সফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাত করে ফুলের তোরা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং দেশরতœ শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে সাংসদ চেয়ারম্যান ও সকল সদস্যদের শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন। এর পরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা- উপজেলার নেতাকর্মীরা নব নিয়োগকৃত চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ১৯৯৭এর ১৬এর(৪) উপ-ধারা এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ(সংশোধন) আইন, ২০১৪এর ২(২) উপধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বতীকালীণ পরিষদ পুনর্গঠনে গত ১০ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব সজল কান্তি বণিক স্বাক্ষরিত পত্রে ১জন চেয়ারম্যান ও ১৪জন সদস্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেন।

এতে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন জেলা আ.লীগ নেতা মংসুইপ্রæু চৌধুরী অপু। আর অপর ১৪জন সদস্যের মধ্যে নির্মলেন্দু চৌধুরী, মো: আবদুল জব্বার, মো: মাঈন উদ্দীন, পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, খোকনেশ্বর ত্রিপুরা, হিরণ জয় ত্রিপুরা, আশুতোষ চাকমা, শুভ মঙ্গল চাকমা, নীলোৎপল খীসা, মংক্যচিং চৌধুরী, রে¤্রাচাই চৌধুরী, মেমং মারমা, শতরুপা চাকমা ও শাহিনা আক্তার।

এদিকে ১১ই ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে নির্বাচিত সকল সদস্যরা ছুঁটে যান জেলা আওয়ামীলীগের কর্ণধার(সভাপতি) ও সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বাসায়। সেখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকে। জেলা পরিষদের পতাকাতলে সম্পৃক্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈশিং(এম.পি) ও সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæু চৌধুরী ও সদস্যরা।

খাগড়াছড়ি জেলা দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক, খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ভাইস-চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, জনকল্যানে বর্তমান পরিষদ আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

প্রসংগত: পরিষদ অন্তর্বতীকালীন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে চেয়ারম্যান করে ১৫সদস্যের পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করেছে। পুরাতন ও নতুন মুখ নিয়ে পুনর্গঠন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সজল কান্তি বনিক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের কথা জানানো হয়। বৃহস্পতিবার ১০ই ডিসেম্বর/২০২০ খ্রি: তারিখ ওই প্রজ্ঞাপনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অন্তর্বতীকালীন পরিষদ পুনর্গঠনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে চেয়ারম্যান করে ও ১৪সদস্যের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট জেলাতে পৌঁছানোর কথা।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ও ১৯৯৭সালে সংশোধিত ১৬ক। (৪) উপ-ধারা এবং ২০১৪সালে সংশোধিত ২(২) উপ-ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বতীকালীন পরিষদ গঠন করেছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়।

পরিষদের পুরাতন সদস্য যারা পুনরায় বহাল রয়েছেন তারা হলেন-নির্মলেন্দু চৌধুরী, মো: আব্দুল জব্বার, পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, খোকনেশ^র ত্রিপুরা, এ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা, মংক্যাচি; চৌধুরী, রে¤্রাচাই চৌধুরী, শতরূপা চাকমা।
নতুন সদস্যরা যোগ হলেন- মো: মাইন উদ্দিন, হিরণ জয় ত্রিপুরা, শুভ মঙ্গল চাকমা, নীলোৎপল খীসা, মেমং মারমা, শাহিনা আক্তার।

পত্রে আরও জানানো হয় গত ২৫শে মার্চ/২০১৫খ্রি: তারিখে ২৯.০০.০০০০.২১৪. ০১. ১২০. ২০০১(আংশিক-১)৮৮ নাম্বার প্রজ্ঞাপন দ্বারা গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আদেশ বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা মংসুইপ্রæু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ১৫সদস্যের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সজল কান্তি ভৌমিক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে পরিষদ পুনর্গঠনের কথা জানানো হয়। এর আগে ৮ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুন:গঠিত ফাইলে অনুমোদন দেন। পুন:গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে সদস্যদের ক্ষেত্রেও রদবদল হয়েছে।

আইন অনুযায়ী জনগণের ভোটে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার কথা থাকলেও বিগত সরকারগুলো ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রথম ও নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ২৫শে জুন। এর পর থেকে আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদ গঠনের জনগণের দাবি উপেক্ষা করে দলীয় লোক দিয়ে পরিচালনা করে আসছে জেলা পরিষদ।
একটি সূত্র জানায়, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুন:র্গঠনের সুপারিশ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পার্বত্য মন্ত্রণালয় এ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৫শে মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ১৫সদস্য করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। পরিষদ পুনর্গঠনে তার পরিবর্তে প্রস্তাবিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক মংসুইপ্রæু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করা হলো। তিনি আগের পরিষদে সদস্য ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯সালের ২৫শে জুন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় সরকার পরিষদ’। একজন চেয়ারম্যান(ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠি) ও ৩০জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদের যাত্রা। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদটি গঠন হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৬সালের ৫ই আগষ্ট ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে নির্বাচিত পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে একজন চেয়ারম্যান(ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠি) ও চার সদস্য মনোনয়ন দিয়ে অন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠন করে। সে থেকে নির্বাচনবিহীন ও ফ্যাক্স বার্তায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পরিবর্তন হয়ে হওয়ায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে আসছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের টানাপোড়েনে আর সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতার অভাবে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার মাধ্যমকে গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল করা হয়নি আড়াই যুগেরও বেশী সময়ে।
১৯৯৭সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বদৌলতে স্থানীয় সরকার পরিষদের নাম বদল করে রাখা হয়‘ পার্বত্য জেলা পরিষদ’। প্রথম অবস্থায় ৬মাস পর পর আদালতের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতো। তবে বর্তমান নিয়োগে বলা হচ্ছে সরকার চাইলে যে কোন মুহুর্তে পরিষদ পুনর্গঠন করতে পারবে। এদিকে জবাবদিহিতা না থাকায় পার্বত্য জেলা পরিষদ দূর্নীতির আখরায় পরিণত হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখিও হলেও কাজের কাজ কোনটাই হয়নি।
বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪সালের ২৩শে নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে সেই ৫সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পরিষদকে ১জন চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৪জন সদস্য করা হয়।