হ্লাচিংমং মারমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন

খাগড়াছড়ি রামগড়ে ইউপিডিএফ’র বিক্ষোভ হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলাতে সেটলার কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য হ্লাচিংমং মারমা(উষা)কে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) রামগড় ইউনিট।

সোমবার(৩রা এপ্রিল) বিকেল ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল থেকে হ্লাচিংমং মারমার মরদেহ বহনকারী গাড়িটি রামগড়ের যৌথ খামার এলাকায় পৌঁছলে শত শত মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে মিছিল সহকারে হ্লাচিংমং মারমার মরদেহটি তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

মিছিলে শেষে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউপিডিএফ’র রামগড় ইউনিটের সংগঠক সাবাক চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত‍্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি অসীম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রনি ত্রিপুরা, সাবেক মেম্বার ও কার্বারী বুলু মারমা, বর্তমান মেম্বার রাপ্রু মারমাসহ বিশিষ্ট মুরুব্বীগণ। সমাবেশে সঞ্চালনা ইউপিডিএফ সংগঠক নিতুন চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা হ্লাচিংমং মারমাকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতাদের মদদে সেটলার বাঙালিরা প্রকাশ্যে নির্যাতন চালিয়ে মানুষ খুনের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারের রেশন সুবিধা নিয়ে সেটলাররা আজ পাহাড়িদের ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ বিভিন্ন অপকর্ম সংঘটিত করছে। বক্তারা সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সরিয়ে নেয়ার দাবি করেন।

বক্তারা হ্লাচিংমং মারমাকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী যোগ্যছোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা জামাল পাটোয়ারী ও বাবুল গংদের অবিলম্বে গ্রেফারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশ শেষে ইউপিডিএফ, পিসিপি, যুব ফোরাম, পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসী ফূল দিয়ে হ্লাচিংমং মারমার মরদেহে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তার মরদেহ ইউপিডিএফ’র পাতাকা দিয়ে সাজানো হয়।

এরপর ধর্মীয় ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে এলাকার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবক, ছাত্রসহ শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পার্টি পতাকায় সজ্জিত করে মরদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছেন ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা। এসময় হ্লাচিংমং মারমার মরদেহ এক নজর দেখছেন এলাকাবাসী। পরে মরদেহ দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

এদিকে মানিকছড়ি উপজেলায় সেটলার বাঙলি কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য হ্লাচিংমং মারমা(উষা) হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আগামীকাল বুধবার (৫ই এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আধাবেলা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড় ও লক্ষাংছড়ি এই পাঁচ উপজেলায় উক্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর উক্ত উপজেলা কমিটিগুলো জনগণকে সাথে নিয়ে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে।

গতকাল সোমবার উষা মারমা হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ইউপিডিএফ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশ থেকে উক্ত অবরোধের ডাক দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (৪ঠা এপ্রিল) ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে হ্লাচিংমং মারমা হত্যার প্রতিবাদে ডাকা আগামীকাল বুধবারের আধাবেলা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ কর্মসুচি সফল করতে খাগড়াছড়ি জেলার অধীন সকল যানবাহন মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সংবাদপত্র ও পত্রিকাবাহী যানবাহন, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের জরুরী কাজে নিয়োজিত যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা বিনা কারণে ও বিনা বিচারে ইউপিডিএফ সদস্য হ্লাচিংমং মারমা হত্যার ঘটনাকে অত্যন্ত জঘন্য ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে বর্ণনা করেন এবং অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার-পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এর আগে সেটলার কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক বিক্ষিপ্ত সড়ক অবরোধ দিলে-ঢালা ভাবে পালিত হয়েছে। ইউপিডিএফ’র নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। মানিকছড়িতে সাংগাঠনিক কাজে গিয়ে জনতার গণপিটুনিতে আহত ইউপিডিএফ কর্মী হত্যা প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলে এই অবরোধ কর্মসূচী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেয়। মিছিল শেষে ৫ই এপ্রিল(বুধবার) সকাল-সন্ধ্যা ৫টি উপজেলা ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়ক অবরোধের ডাক দেন ইউপিডিএফের উপজেলা পোস্ট পরিচালক অংশি মারমা।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা সোমবার(৩রা এপ্রিল ২০২৩) এক বিবৃতিতে জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় হ্লাচিংমং মারমা(উষা) নামে এক ইউপিডিএফ সদস্যকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার দুপুর ১টায় উপজেলার জামতল এলাকায় ইউপিডিএফ সর্মথিত পিসিপি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৬০/৭০জন নেতাকর্মী আচমকা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা একটি অটোরিক্সা ভাঙচুর করে এবং চালক ও ভিডিপি সদস্য মো: শাহাবুল ইসলাম(৪৫)কে মারধর করে।

বিক্ষোভ শেষে মানিকছড়ি উপজেলা ইউপিডিএফ(মূল) দলের পোস্ট পরিচালক অংশি মারমা বাঙালি কর্তৃক ইপিডিএফ(মূল) দলের কালেক্টর হ্লাচিংমং মারমা(উষা)কে হত্যার বিচার ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে ৫ই এপ্রিল বুধবার আধাবেলা রামগড়, গুইমারা, মাটিরাংগা, মানিকছড়ি ও লক্ষীছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধের ডাক দেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্ষোভকারীরা দ্রুুত সটকে পড়ে।

গত রোববার হ্লাচিংমং মারমা(উষা) সাংগঠনিক কাজে যোগ্যছোলা ইউনিয়নের স্কুলপাড়া নামক স্থানে গেলে সেটেলার বাঙালিরা তাকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। এরপর তাকে আহত অবস্থায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি মারা যান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্মাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানে হয়।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার সময় মানিকছড়ির যোগ্যছোলা ইউনিয়নের কালাপানির স্কুলপাড়া এলাকায় সাংগঠনিক কাজে গেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জামাল পাটোয়ারীর নেতৃত্বে সেটলার বাঙালিরা ইউপিডিএফ সদস্য হ্লাচিংমং মারমাকে ধরে অমানুষিকভাবে মারধর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর তাকে পুলিশী প্রহরায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতলে ভর্তি করা হলে সেখান তার মৃত্যু হয়।