পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কলাই শাকে ভাগ্য বদলের অদম্য চেষ্টা বৃদ্ধা ফৌজিলার

৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা, ত্রিশ বছর ধরেই শাক বিক্রি করছেন তিনি। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ৬ সন্তানকে নিয়ে আলাদাভাবে জীবন যাপন করছেন প্রায় তিনযুগ ধরে। জীবনের সবটুকু উজার করে পরম যত্নে এবং ভালবাসায় সাজাতে চেয়েছিলেন জীবন সংসার। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় নারী লোভী স্বামীর একাধিক বিয়ে আর ছেলে মেয়ের ভরন পোষন না দেয়ায় হাফিয়ে উঠেছিলেন। তাই সন্তানদের মুখের আহার যোগাতে নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। শুরু হয় হার না মানা জীবনের গল্প।

এখন ৬ সন্তানের মধ্যে ৪ মেয়ে ও ২ ছেলেও বড় হয়ে বিয়ে করে বেঁধেছেন সুখের সংসার। কিন্তু জীবনে ত্রিশ বছর কেটে গেলেও আজও শাক বিক্রি করেই চলছে তার জীবিকা। তবে সম্প্রতি সময়ে কলাই শাক বিক্রিতে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন বয়োবৃদ্ধ এই নারী।

উপজেলার চাকামইয়া ইউপির পূর্ব গামরবুনিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফৌজিলা বেগম স্বামী জলিলের অবহেলা আর নির্যাতনে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন তিনি। প্রথমে বিস্তীর্ণ মাঠ এবং ফসলী ক্ষেত খামার থেকে বিভিন্ন প্রভৃতির শাক কুড়িয়ে নিয়ে হাটে বিক্রি করতেন।

আর এই শাক বিক্রির রসদ থেকে বিন্দু বিন্দু জমিয়ে করেন ছোট্র পুঁজি। এর পরে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রামীন জনপদ থেকে শাক কুড়ানোর পাশাপাশি জমানো পুঁজি দিয়ে কৃষকের খামার থেকে শাক ক্রয় শুরু করেন তিনি। আর এভাবেই কেটে গেছে তার ৬ সন্তানকে নিয়ে প্রায় ৩ যুগ। কিন্তু আজও পেশা পরিবর্তণ করতে পারেননি ফৌজিলা। এখন শেষ বয়সে শাক বিক্রির রসদ থেকে প্রায় সবটুকুই জমানোর অদম্য চেষ্টা তার। আর এই চেষ্টায় সফলতার হাতছানি দিচ্ছে মৌসুমি কলাই শাক।

শনিবার (১৪ জানুয়ারী) সকালে কলাপাড়া পৌর শহরের কাঁচা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ফুটপাতের চটে কলাই শাকের ভাগ দিয়ে বসেছিলেন ফৌজিলা। কিন্তু মূহুর্তেই সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। ২০ টাকা দরে ভাগ বিক্রি হলেও কেজি হাকাচ্ছিলেন ২’শ টাকায়। আর সেই দামেই ১১ কেজি কলাই শাক বিক্রি করেন মাত্র তিন ঘন্টায়। তার ভাষ্যমতে মুখরোচক এই মৌসুমি কলাই শাক কিনতে দাম নিয়ে তেমন কৌতুহল নেই ক্রেতাদের। কারণ হিসেবে তিনি জানান, এখন আর আগের মত কলাই শাক চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে গ্রামে গিয়ে ১’শ টাকা কেজিতে কিনতে চাইলেও তাও মিলছে অনেক কম। তবে যেদিন কলাই শাক ক্রয়,বিক্রয় করতে পারেন সেদিন হাজার খানেক টাকা লাভ হয় তার।

জানালেন প্রতিদিনই যদি কলাই শাক বিক্রি করতে পারতেন, তাহলে বদলে যেতে পারতো তার জীবনের গল্প। তবে বার্ধক্য জীবন নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। কোন সন্তানের কাছে বোঝা হতে চাননা বলে চাইছেন সরকারী সহায়তা কিংবা বয়ষ্ক ভাতা। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, বৃদ্ধা মাকে বয়ষ্ক ভাতার আওতায় নেয়া হবে।