পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে তিনদফা অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। প্রবল এ বন্যার প্রভাবে সাগর ও নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় কলাপাড়ার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীন বেড়িবাধ’র সংস্কার না থাকায় জোয়ারের তান্ডবে অরক্ষিত অংশ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশের ফলে ভেসে গেছে অসংখ্য ঘের, পুকুর ও মৎস্য খামারের চাষকৃত মাছ।

উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের অন্তত ১৯টি গ্রামে বাড়ির উঠানে, ঘরের মেঝেতে এখন থৈ থৈ করছে লোনা পানি। ফলে উনুন জালাতে পারছেন না অনেকেই।
মঙ্গলবার রাত থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বেড়িবাধ বিধ্বস্ত লালুয়ার ১৪ টি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ ঠাই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রসহ স্বজনদের বাড়িতে।

এদিকে চম্পাপুর ইউপির দেবপুর গ্রামে নতুন করে বেড়িবাধ ভেঙ্গে গ্রামের অভ্যন্তরে উচ্চ জোয়ারের পানি প্রবেশের ফলে পানিবন্দী হয়ে পরেছে চারটি গ্রামের মানুষ। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সঙ্কট। এছাড়া মহিপুর, নীলগঞ্জ, ধুলাসার, ধানখালী, লতাচাপালী, কুয়াকাটা এলাকার বেশকিছু গ্রাম এবং নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকাতেও তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও পকুর,নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফসল। সঙ্কট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য এবং স্যানিটারি ব্যবস্থায়।

অপর দিকে শঙ্কায় নীদ্রাহীন রাত কাটিয়েছে সাগর ও নদী তীরের বাসীন্দারা। এদের মাঝে অনেক নারী,শিশু ও বৃদ্ধরা আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরলেও প্রবল বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি বেধে টিকিয়ে রাখার লক্ষে নিরাপদে যাননি অনেক পুরুষ মানুষ। বন্যা কবলিত এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখন অনেকটাই জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চরম দুর্যোগে থাকা বানভাসী এসব মানুষের অভিযোগ জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে ধেয়ে আসা জলোচ্ছাস কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময়ই কেবল অরক্ষিত বেড়িবাধগুলো সংস্কারের আশ্বাস দেয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। তবে পরিস্থিততি স্বাভাবিক হলে এসব বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ সংস্কার কিংবা পুর্নস্থাপনের ব্যপারে অনেকটাই উদাসীনতার ভূমিকা পালন করেন সংশ্লিষ্টরা।

লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ‘একাধিকবার আমার ইউনিয়নের রক্ষাবাধ সংস্কারের দাবীতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। কিন্তু দুটি মন্ত্রাণালয়ের রশি টানাটানিতে আজও বাধ নির্মান কিংবা সংস্কার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ১৪ টি গ্রাম সম্পূর্ন প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও প্রায় সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতন জীপনযাপন করছে।’

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌলী মো. হালিম ছালেহীন জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মহিপুর ইউপির নিজাপুর, ধুলাসার ইউপির ধুলাসার পয়েন্ট, চম্পাপুর ইউপির দেবপুর, নীলগঞ্জ ইউপির গইয়াতলা এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাধ সংস্কারের লক্ষে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। তবে লালুয়া ইউপির ক্ষতিগ্রস্থ ৮ কিলোমিটার বেড়িবাধ নির্মানে পায়রা বন্দরকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ‘ইতোমধ্যে ১৬’শ পুকুর ও ২’শ ৮২ টি মৎস্য ঘের উচ্চ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। যা ক্ষতির পরিমান এখনও পর্যন্ত দুই কোটি টাকা।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুহানাত শহীদুল হক বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে শুকনা খাবারের জন্য নগদ ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ এবং গো-খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর পরেও প্রতিটি ইউয়িনে ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে পানি নিষ্কাশন না হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কতোটা তা নিরুপন করা সম্ভব হচ্ছে না।’