পার্বত্য জেলার বান্দরবানে কুকি দমন অভিযান: বেসামরিক সুরক্ষা দাবি সিএইচটি কমিশনের

পার্বত্য জেলার বান্দরবানে কুকি দমন অভিযান: বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা দাবি জনিয়েছেন সিএইচটি কমিশন। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন(সিএইচটি কমিশন) বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশন্যাল আর্মির বিরুদ্ধে চলমান সামরিক অভিযানে বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

বান্দরবানের চলমান অস্থিরতায উদ্বেগ জানিয়ে কমিশন বলেছে, ‘সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টিকে অবশ্যই সব সময় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

গত মঙ্গলবার(২৩শে মে ২০২৩) কমিশনের কো-চেযার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপৌলৌ ও মিরনা কানিংহ্যাম কান এই বিবৃতি দেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে তারা বলেন, ‘গত ৮ই মে রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইং¶ পাড়ায় ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী কর্তৃক ৩জন বমকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে; এই একই বাহিনী গত ৬ই এপ্রিল অন্য ৮জন বমকে হত্যা করেছিল।

‘স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, মৃত ব্যক্তিদের কেউ কোন সশস্ত্র দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না এবং তাদের একজন নেমথাং বম(৪৩) রোয়াংছড়ি আওয়ামীলীগের ৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন।’
কমিশনের নেতৃবৃন্দ ১৭ই মের আইএসপিআর-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কুকি-চিন আর্মির বিরুদ্ধে অভিযানে দুই জন সৈনিক নিহত ও অপর দুই জন অফিসার আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং নিহত ও আহত সেনা সদস্য ও অফিসারদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

সামরিক অভিযানের সময় জুয়েল ত্রিপুরা(২৫) নামে এক আদিবাসী নিহত ও আব্রাহাম ত্রিপুরা(৩৫) নামে অন্য একজন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিযে কমিশন জানায়, ‘উক্ত দুই ব্যক্তি ছিলেন বেসামরিক লোক, অথচ আইএসপিআর-এ তাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

কমিশনের তিন কো-চেয়ার আরো বলেন, ‘আগরতলা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি প্রোটেকশন ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফ দুটি পৃথক বিবৃতিতে অভিযোগ করে যে, নিহত ও আহত বেসামরিক লোকদেরকে সেনাবাহিনী মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিল।

‘তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে, গত ১৫ই মে ২০২৩ সেনাবাহিনী রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের পাসিং পাড়া ও এমটিএস পাড়া থেকে মোট ৩২জন বেসামরিক ¤্রাে, ২নং রুমা ইউনিয়নের মংইউ পাড়া থেকে ১০জন বেসামরিক মারমা এবং রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সবসাং বাশিরাম পাড়া থেকে ২২জন বেসামরিক ত্রিপুরাকে(জুয়েল ত্রিপুরা ও আব্রাহাম ত্রিপুরা এই দলের মধ্যে ছিলেন) নিযে যায়।

‘অধিকন্তু ১৭ই মে সেনাবাহিনী ২নং রুমা ইউনিয়নের চেইপো গ্রাম থেকে ১০জন বেসামরিক মারমা এবং রুমা বাজারের লুংছড়ি গ্রাম থেকে অন্য ১০জন বেসামরিক মারমাকে কেএনএ-এর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়ার জন্য নিযে যায়।’

এইসব বেসামরিক লোকজনদের এখন কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে কমিশন বিবৃতিতে উল্লেখ করে।
‘গত ১৮ই মে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একাত্তর টিভির লাইভ টকশোতে বান্দরবানের একজন সুপরিচিত সাংবাদিক অভিযোগ করেন যে, জুয়েল ত্রিপুরা মারা যান এবং আব্রাহাম ত্রিপুরা আহত হন যখন সেনাবাহিনী তাদেরকে কেএনএ-এর বিরুদ্ধে অভিযানে কুলি হিসেবে ব্যবহার করছিল।’

কমিশনের মতে, ‘যদি এই সকল অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর জরুরী ভিত্তিতে মনোযোগ দেয়া দরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না; এ বিষয়ে জেনেভা কনভেনশনের ১নং অতিরিক্ত প্রটোকলের ৫১(৭) অনুচ্ছেদে বিশেষভাবে বলা আছে।
‘অধিকন্তু চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন বেসামরিক লোকজনকে নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা উভয় পক্ষের(যুদ্ধরত) জন্য নিষিদ্ধ করেছে।
‘তাছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম স্ট্যাচুটস অনুচ্ছেদ ৮(২)(ন)(ীীররর) মোতাবেক(বেসামরিক লোকজনকে) মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন বিবৃতিতে অভিযোগের বিষয়ে দ্রুুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত, সামরিক অপারেশনে নেয়া বেসামরিক লোকদের অবিলম্বে ছেড়ে দেয়া এবং বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি এড়াতে ও কমাতে সম্ভাব্য সকল সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া কমিশন বান্দরবানের চলমান সমস্যাকে শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক ভাবে সমাধানেরও আহ্বান জানিয়েছে।