বগুড়া-২ আসনে নির্ভার ট্রাক; আসন ধরে রাখতে মরিয়া লাঙ্গল

উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলা। পাশাপাশি রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নির্দশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসনে ভোটের মাঠে ট্রাক অনেকটা নির্ভার।

আসন ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে লাঙ্গল। এ আসনে নৌকা না থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আওয়ামীলীগ। আওয়ামী ভোটারদের নিজ পক্ষে টানতে ট্রাক ও লাঙ্গল প্রার্থীদের মধ্যে শেষ সময়ে এসে তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে করে ভোটের মাঠ অনেকটা জমজমাট হয়ে উঠেছে। বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্’র প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী বিউটি বেগমের পক্ষে কাজ করছে।

তবে জাপা প্রার্থী জিন্নাহ্র দাবী আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতাকর্মীসহ বেশিরভাগ অংশই তার সঙ্গে রয়েছে। শেষ সময়ে এসে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আকরাম হোসেন ভোটের মাঠ থেকে কিছুটা পিছিয়ে পরেছে। তবে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষই চিন্তায় রয়েছে। এক জরিপে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৩৫- ৪০ শতাংশ ভোট পরতে পারে এবারের নির্বাচনে।

বগুড়া-২ শিবগঞ্জ আসনে মোট ৭জন প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ (লাঙ্গল প্রতীকে) স্বতন্ত্র প্রার্থী বিউটি বেগম (ট্রাক প্রতীকে) আলহাজ্ব আকরাম হোসেন (কাঁচি প্রতীকে) আল ফারাবি মো: নুরুল ইসলাম (বে প্রতীকে) তৃণম‚ল বিএনপির বজলুর রহমান (সোনালী আঁশ প্রতীকে) বিএনএফ’র প্রার্থী বরকতউল্লাহ (টেলিভিশন প্রতীকে) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মুনছুর রহমান শেখ (ডাব প্রতীক)।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ আসনে প ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মাওঃ শাহাদুজ্জামান, ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি রেজাউল বারী ডিনা, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একেএম হাফিজুর রহমান, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা, নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একেএম হাফিজুর রহমান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ (বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায়) ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিজয়ী হন।

এক জরিপে দেখা যায়, বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের প ম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।

তারই ভিত্তিতে বগুড়া-২ আসনে প ম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি উপস্থাপনের চেষ্ঠা করা হলো। ১৯৯১ সালের প ম সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১০.৯৬%, বিএনপি ২৪.২১ %, জাতীয় পার্টি ৬.১৬%, জামায়াত ইসলামী ৩৩.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৪.৭% ভোট পায়। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৩.৭৯ %, বিএনপি ৫১.৫৮ %, জাতীয় পার্টি ১৪.৯৩%, জামায়াত ইসলামী ১৭.০৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৬৪% ভোট পায়। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.১১%, ৪ দলীয় জোট ৬৩.৭৭ %।

জাতীয় পার্টি ৯.৬৭%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৫% ভোট পায়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৩৯.৪৮%, ৪ দলীয় জোট ৫৯.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৮৫% ভোট পায়। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বগুড়া-২ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও এখন তাদের এখন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।

শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের আব্দুর রাজ্জাক ও মাসুদ রানা বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটের কোন ইমেজ নেই। তাছাড়া বিএনপির চলমান ভোট বিরোধী অবস্থানের কারণে ভোটার উপস্থিতি অনেকটা কম হতে পারে। আমরা সাধারণ ভোটারটা কিছুটা দোটানাটানির মধ্যে রয়েছি।

ময়দানহাট্ট ইউনিয়নের জাভেদ ও ফোরকান বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৩৭ বগুড়া-২ আসনে ট্রাক ও লাঙ্গলের মধ্যে তিব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে।

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম মাস্টার বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় কোন বাধ্যবাধকতা নেই পছন্দসই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার।

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী দুইবারের সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ বলেন, আমি লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছি।

আমি সব ভোটার ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ করবো ৭ তারিখে আমার লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেবেন। আমি ১০ বছর এমপি হিসেবে এ উপজেলায় আছি। মানুষ আমাকে আস্থার প্রতীক ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবেই জানে। আমি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। মানুষ আমাকে আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত করলে বাকি উন্নয়নম‚লক কাজগুলো করা সম্ভব হবে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ বলেন, আমি একজন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। সবাই আমাকে ৭ তারিখে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আমি কথা দিচ্ছি আমাকে নির্বাচিত করলে আপনারা আগামী পাঁচ বছর নিরাপদে থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন।

এ আসনের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী নারী নেত্রী বিউটী বেগম দৈনিক জয়যুগান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন শঙ্কা নেই। ভোট স্বচ্ছ ও সুন্দর হবে-এমনটি জনগণ মনে করে। এবারের নির্বাচনে জনগণের কাছে আমি সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। আমি পূর্বে ২বার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমার বরাদ্দের সকল অংশ সাধারণ জনগনের কল্যাণে ব্যায় করেছি। আমি জেল খেটেছি। আমিই জনগণের একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে গিয়েছি, মা-বোনদের কাছে আমি গিয়েছি, ভোট চেয়েছি। জয়ী হলে তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি। জনগণ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট